Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Asansol Kulti Colliery Problem

হঠাৎ রাস্তা ফেটে দু’ভাগ! ধস নেমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি পশ্চিম বর্ধমানে, আতঙ্কে এলাকার বাসিন্দারা

কিছু দিন আগেও ধস নেমেছিল আলডি যাওয়ার রাস্তায়। ধসপ্রবণ এলাকাটি বাসযোগ্য না হওয়ায় অনেক আগেই এখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল পূর্বতন বাম সরকার।

wide crack on the road creates panic among the locals of West Bardhaman\\\\\\\\\\\\\\\'s Kulti

চওড়া ফাটল ধরেছে কুলটির রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৩:১৮
Share: Save:

ঢালাই করা পাকা রাস্তায় চিড় ধরেছিল দিন দুই আগে। হঠাৎ দেখা গেল সেই চিড় আরও চওড়া হয়ে ফাটলের আকার নিয়েছে। সে ফাটল প্রস্থে এতটাই চওড়া যে, তার উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্ভব নয়। তা ছাড়া রাস্তাজুড়ে আড়াআড়ি ফাটলের চারপাশ মাটি থেকে কিছুটা নীচে নেমেও গিয়েছে। দেখলে মনে হচ্ছে, ভারী কিছুর চাপ পড়লে যে কোনও মুহূর্তে পুরোটাই ধসে পড়তে পারে! পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল লাগোয়া কুলটিতে এই ফাটল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়, ‘‘রাস্তা ধসেছে, এর পর বাড়ি ধসলে কী করব? কোথায় যাব?’’

আসানসোল, কুলটি সাধারণত কয়লা খাদান অঞ্চল। ধস প্রবণও। তার কারণও আছে। মাটির নীচ থেকে কয়লা তোলার পর যে ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়, তা নিয়ম মেনে বালি দিয়ে ভর্তি করা হয় না অনেকক্ষেত্রেই। যার ভুক্তভোগী হন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেমন বৃহস্পতিবার হয়েছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, ‘‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অবৈধ ভাবে কয়লা উত্তোলন হয়েছে বলেই এ ভাবে ধস হচ্ছে। কোনও দিন দেখতে হবে চোখের সামনেই বাড়ি ধসে নেমে যাচ্ছে মাটির নীচে।’’ আসানসোল-কুলটি অঞ্চলে এমন ঘটনারও উদাহরণ আছে।

স্থানীয়রাই জানাচ্ছেন, বছর সাত-আটেক আগেই তেমন ঘটনা ঘটেছিল। বাড়ির উঠোনে খেলা করছিল কয়েকটি শিশু। আচমকাই সেখানকার মাটি ধসে নেমে যায় নীচে। ধসের সঙ্গে ভিতরে পড়ে যায় একটি শিশুও। মাটির গভীরের তাপে পুড়ে মৃত্যু হয় তার। স্থানীয় পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘এমন ঘটনায় অস্বাভাবিক নয়। তার কারণ মাটির নীচে থাকা কয়লা। থাকে মিথেন গ্যাসও। তা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে আগুন ধরতে পারে। এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, যাতে কোলিয়ারি এলাকায় কয়লা খাদানের পর ফাঁপা জায়গা তৈরি না হয়, তার জন্য কয়লাখাদানের পর নিয়ম মেনে বালি দিয়ে ভরাট করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হল, অনেকেই বেআইনি ভাবে কয়লা খাদান করেন এবং নিয়ম কানুনের ধার ধারেন না। তার থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।’’

বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি ঘটেছে কুলটি থানার অন্তর্গত আলডি গ্রামে যাওয়ার রাস্তায়। একাধিক জায়গায় এই ধরনের ফাটল দেখা গিয়েছে। ফাটলের কথা জানার পরই ইসিএলের তরফে ধস কবলিত এলাকাটি ঘিরে ফেলা হয়।এমনকি আলডি গ্রাম যাওয়ার রাস্তাটিও ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু তার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেই বিপজ্জনক রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ আলডি গ্রামে যাওয়ার মূল পাকা রাস্তা ওটিই।

কিছু দিন আগেও ধস নেমেছিল আলডি যাওয়ার রাস্তায়। ধসপ্রবণ এলাকাটি বাসযোগ্য না হওয়ায় অনেক আগেই এখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল সরকার। অন্যত্র বাড়ি বানিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার কথাও হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ‘‘পুনর্বাসনের জন্য পরিচয়পত্র সরকার দিয়েছে অনেক দিন আগে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নতুন আশ্রয়ের কোনও বন্দোবস্ত হয়নি।’’

এই অভিযোগে স্থানীয়দের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে যেগুলো ধসপ্রবণ এলাকা, সেখানে মানুষকে পুনর্বাসন দিতে হবে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার এই পুনর্বাসনের জন্য রাজ্যকে টাকা দেওয়ার পরেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সব মানুষজনকে ধসপ্রবণ এলাকায় বাস করতে হচ্ছে। এর জন্য পুরোপুরি রাজ্য সরকার দায়ী।’’

সিপিআইএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ও আসানসোল কয়লা অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলনের অভিযোগ করেছেন। এ-ও বলেছেন, ওই অবৈধ খাদানের জন্যই ধস নামছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বাম নেতার অভিযোগ, ‘‘বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন আন্দোলন করে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্র থেকে টাকা নিয়ে আসা হয়েছিল। এমনকি, সার্ভে করে আইডেন্টিটি কার্ডও সকলকে দেওয়া হয়েছিল। অথচ তৃণমূল সরকার এত দিন থাকার পরেও সেই পুনর্বাসন প্রকল্পে কেউ ঘর পেল না।’’

যদিও তৃণমূলের দাবি, তারা পুনর্বাসনের টাকা পায়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু বলেন, সিপিএম এবং বিজেপি শুধু অভিযোগ করতে জানে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকাগুলো আমাদের দিচ্ছে না, সেই টাকা নিয়ে আসার জন্য কোন রকম উদ্যোগ তাঁরা নেন না। শুধু ক্যামেরার সামনে মুখ দেখিয়ে নিজেদের হাইলাইট করার জন্য এই সব কাজ করেন। এই সব মানুষের পাশে তৃণমূলই থেকেছে আগামী দিনেও তারাই থাকবে।’’ যদিও পুনর্বাসনের ব্যাপারে কোনও সুরাহার কথা শোনা যায়নি তৃণমূল নেতার কথায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol kulti Colliery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE