Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩
Truck Overturned

বাড়িতে ঢুকে পড়ল বালি ভর্তি ট্রাক, মৃত্যু

পুলিশ জানায়, ওই গ্রামের বাসিন্দা শেখ সদরুল (৪৩) ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগম ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। ট্রাকের ধাক্কায় বাড়ির ইটের পাঁচিল ভেঙে যায়।

picture of the truck.

বাঁ দিকে, উল্টে পড়ে রয়েছে ট্রাকটি। ডান দিকে, জমায়েত ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর। রবিবার কামালপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১১
Share: Save:

রাস্তার বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালি বোঝাই ট্রাক উল্টে গেল বাড়িতে। মৃত্যু হল এক জনের। আহত হয়েছেন দু’জন। খণ্ডঘোষের কামালপুর গ্রামে শনিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে, রবিবার এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, বাড়তি বালি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও পুলিশ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তা মানতে চায়নি। তবে বেআইনি ভাবে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, “ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই গ্রামের বাসিন্দা শেখ সদরুল (৪৩) ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগম ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। ট্রাকের ধাক্কায় বাড়ির ইটের পাঁচিল ভেঙে যায়। প্রচুর বালি ঘরে ঢুকে পড়ে। পাঁচিল ভেঙে শেখ সদরুলের মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী জখম হওয়ায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সদরুলের পাশের ঘরে শুয়েছিলেন তাঁর ভাই শেখ তাজরুল। ভাঙা পাঁচিলের একটি অংশ তাঁর উপরে পড়ায় আঘাত পান। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে চালকের খোঁজ মেলেনি।

এর আগে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের মুইদিপুর গ্রামে বালি বোঝাই ট্রাক উল্টে গিয়েছিল একটি বাড়িতে। মুণ্ডেশ্বরী থেকে বালি তুলে হুগলি যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুই শিশু ও তাদের মায়ের মৃত্যু হয় সে ঘটনায়। ক্ষোভে বালি খাদানের অফিসে আগুন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছিল জনতা। তার আগে, সে বছরই ১ জানুয়ারি রাতে গলসির শিকারপুরে দামোদর থেকে বালি নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাঁধের রাস্তা থেকে ট্রাক উল্টে একটি বাড়িতে পড়ায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তখনও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শিকারপুর।

এ দিন ঘটনার পরে বড় কোনও গোলমাল না বাধলেও, ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুর্ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পরেও উল্টে থাকা ট্রাকটি তুলতে দেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আশঙ্কা করে অতিরিক্ত পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। মৃতের মা জাহানারা বেগম রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে অ্যাসবেস্টসের চালের একটি বাড়িতে থাকেন। তাঁর দাবি, “রাত তখন ক’টা, বলতে পারব না। হঠাৎ হুড়মুড় আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখি, একটি ট্রাক উল্টে রয়েছে আমাদের পাকা বাড়ির সামনে। কাছে গিয়ে দেখি, পাহাড় প্রমাণ বালিতে বাড়ি ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ছেলেদের ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনি। সদরুল আর বৌমা বালি চাপা পড়ে রয়েছে দেখে আমি পড়শিদের চিৎকার করে ডাকি।’’ আশপাশের বাসিন্দারা বালির নীচ থেকে সদরুল ও তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই সদরুলকে মৃত বলে জানানো হয়।

Advertisement

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, একে রাস্তা খারাপ, তার উপরে অতিরিক্ত বালি নিয়ে ট্রাক চলাচল করার জন্যই চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে। পুলিশ ও ভূমি দফতরের দাবি, ১৬ চাকার ট্রাকে সাধারণত ‘ওভারলোড’ হয় না। দুর্ঘটনার পরে ৫৭ টন বালি মিলেছে। চালক পলাতক থাকায় বালি পরিবহণের নথিপত্র পায়নি পুলিশ। তাই ওই বালি বৈধ ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। বর্ধমান দক্ষিণের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী ও মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অমিত ভট্টাচার্যেরা বলেন, “ওই ট্রাক বাড়তি বালি বোঝাই করে যাচ্ছিল না। চালক পলাতক থাকায় নথি পাওয়া যায়নি। তাই কোন খাদান থেকে বালি নিয়ে কোথায় যাচ্ছিল, তা জানা যায়নি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.