ভ্যানে বিক্রিবাটা সুশোভনের। — নিজস্ব চিত্র।
পরনে টি-শার্ট ও পাজামা। পিঠে ব্যাগ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিঁয়াজ-লঙ্কা কেটে ছাতুর শরবত তৈরি করে বিক্রি করছেন বছর কুড়ির তরুণ। পিঠের ব্যাগে বই। কিছু ক্ষণ পরেই যাবেন কলেজ। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে এ ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বর্ধমানের রাজ কলেজের প্রথম বর্ষের বাংলা অনার্সের ছাত্র সুশোভন দত্ত।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪ নম্বর গেটে ছাতুর শরবত বিক্রি করতে দেখা যায় সুশোভনকে। শহরের বাহির সর্বমঙ্গলা এলাকার বাথানপাড়া নজরুলপল্লির বাসিন্দা তিনি। ছোট থেকে পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে অভাব। বাবা মারা গিয়েছেন। রয়েছেন মা ও দাদা। দোকানে কাজ করেন দাদা। সুশোভনকে নিজে উপার্জন করেই পড়াশোনা চালাতে হয়। তাই প্রতিদিন সকালে তাঁর ঠিকানা হাসপাতালের গেটের বাইরে।
সুশোভন জানান, প্রতিদিন সকালে স্নান সেরে ভ্যান নিয়ে হাসপাতালের ওই গেটে চলে আসেন। এর পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছাতু বিক্রি করেন। সেখানেই ভ্যান রেখে পাশে রাজ কলেজে ক্লাস করতে যান। বিকেলে কলেজ শেষে ভ্যান নিয়ে বাড়ি যান। তিনি জানান, নিজের পড়া চালানোর পাশাপাশি, সংসারেও সাহায্য করেন।
সুশোভন জানান, অভাবের কারণে পরিবারের লোকজন চান না তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান। তবে রাজ কলেজে সুযোগ পাওয়ার পরে পড়া ছাড়তে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ার খরচ তুলতে ব্যবসা শুরু করি।’’ তিনি জানান, অভাবের জন্য টিউশন নিতে পারেন না। প্রতিদিন কুড়ি টাকা ভাড়ায় ভ্যান নেন। সেখানে দিনে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকার বেচাকেনা হয়। তাতে ২০০-৩০০ টাকা লাভ থাকে। তবে মাঝেমধ্যে পড়াশোনার জন্য দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাঁকে। আবার অনেক সময়ে ক্রেতার ভিড় জমে গেলে দু’একটি ক্লাস করা হয়ে ওঠে না। তবে সব কিছু সামলে বাংলা নিয়ে পড়া শেষে শিক্ষকতা করতে চান সুশোভন।
রাজ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অমরকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সুশোভন মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলে। লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সাধ্যমতো ওকে সাহায্য করি। ওর লড়াইকে কুর্ণিশ জানাই।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের আধিকারিক আব্দুল নাসির খান বলেন, ‘‘হাসপাতালের বাইরে ছেলেটিকে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতে দেখেছি। পরে জানতে পারি ওঁর লড়াইয়ের কথা। ওঁকে
সম্মান করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy