Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Raju Jha Death

স্তব্ধ ‘দাদার’ পাড়া, প্রশ্ন কেন এই পরিণতি

রবিবার রাজু ঝায়ের দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ‘নিউ বিল্ডিংয়ের’ দোতলায় ভর্তি রাজুর সঙ্গী, জখম ব্রতীন মুখোপাধ্যায়।

উপরে, রাজুর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গাপুরের শ্মশানে। নীচে, ঘটনাস্থলে তদন্তে ফরেন্সিক দল। ছবি: বিকাশ মশান ও জয়ন্ত বিশ্বাস

উপরে, রাজুর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গাপুরের শ্মশানে। নীচে, ঘটনাস্থলে তদন্তে ফরেন্সিক দল। ছবি: বিকাশ মশান ও জয়ন্ত বিশ্বাস

সুপ্রকাশ চৌধুরী , নীলোৎপল রায়চৌধুরী
বর্ধমান, রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৫
Share: Save:

এক দিকে, রাজু ঝায়ের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা। অন্য দিকে, থমথমে রাজুর বর্তমান শহর দুর্গাপুর এবং পুরনো এলাকা রানিগঞ্জ। শনিবার রাতেই দুর্গাপুর ও রানিগঞ্জে রাজুর নিহত হওয়ার খবর জানাজানি হতেই তাঁর অনুগামী ও এলাকার কিছু সাধারণ মানুষের বক্তব্য, “দাদা পাশে থাকতেন সবার। ওঁর এমন পরিণতি মানা যায় না।” উল্টো দিকে, শহরবাসীর বক্তব্য, বেআইনি কারবারকে কেন্দ্র করে আর কত রক্ত ঝরবে এই জেলায়!

রবিবার রাজু ঝায়ের দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ‘নিউ বিল্ডিংয়ের’ দোতলায় ভর্তি রাজুর সঙ্গী, জখম ব্রতীন মুখোপাধ্যায়। এই দু’কারণেই বর্ধমান মেডিক্যালে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ। নিউ বিল্ডিংয়ের দোতলায় আহতের ঘরের সামনে এবং নিউ বিল্ডিংয়ের ঢোকার মুখে ছিল পুলিশের পাহারা। পাশাপাশি, হাসপাতাল চত্বরেও পুলিশ ছিল। মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ মর্গে বর্ধমান থানার আধিকারিকের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় সকাল থেকেই। মর্গের সামনে ব্যারিকেড করে দেয় পুলিশ।

মেডিক্যাল সূত্রে খবর, রাজুর দেহের ময়না-তদন্তের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড বসানো হয়। দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক দেবাশিষ সরকার। এ ছাড়াও ছিলেন মেডিসিন, শল্য এবং অস্থি বিভাগের চিকিৎসকেরা। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়। বর্ধমান থানার দু’টি পুলিশ ভ্যান রাজুর শববাহী গাড়িটিকে নিরাপত্তা দিয়ে দুর্গাপুরে বিধাননগরের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ দিকে, দিনভর রাজুর বাড়ির সামনে লোকজনের আসা-যাওয়া লেগেই ছিল। কিন্তু ভিতরে কাউকে ঢুকতে দেননি পরিবারের সদস্যেরা। শববাহী গাড়ি সটান বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে প্রধান দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিচিত এবং দূর সম্পর্কের পরিজনদের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। আধ ঘণ্টা পরে দেহ রেখে শববাহী গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের এবং রাজুর ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়।

রাজুর একদা পড়শি রানিগঞ্জের সুনীল সাউ জানান, গরিব পরিবারের সদস্যদের মেয়ের বিয়ে, পড়াশোনা, শ্রাদ্ধের মতন নানা বিষয়ে সহযোগিতা করেন রাজু। শিতরাগ পাসোয়ান, মালা ভার্মারা জানান, পাড়ায় কালী মন্দিরও তৈরি করে দিয়েছিলেন রাজু। প্রতি বছর কালী পুজো ও হোলির দিনে আসতেন সেখানে। উকিল পাসোয়ান নামে এক ব্যক্তি বলেন, “রাজুর সমাজসেবার কথা কেউই ভুলতে পারবেন না। লকডাউনের সময় ও গোটা পাড়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনের বক্তব্য, “দাদা সব সময় পাশে থাকতেন। এমন পরিণতি, মানা যাচ্ছে না।”

তবে এমন ‘পরিণতি’ নতুন দেখছে না পশ্চিম বর্ধমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্গাপুর ও রানিগঞ্জ, দু’জায়গারই কেউ-কেউ বলছেন, “এর আগেও বেআইনি কারবারে যুক্ত লোকজন খুন হয়েছেন এই জেলায়। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এত মৃত্যু। কবে লাগাম পড়বে এ সব কারবারে? কবেই বা বন্ধ হবে এমন মৃত্যু-মিছিল?”

এ দিকে, রাজুর সঙ্গেই গুলিবিদ্ধ জখম ব্রতীন বর্তমানে বেনাচিতির বাসিন্দা হলেও, তাঁর পৈতৃক বাড়ি অন্ডালের দক্ষিণখণ্ডের রায়পাড়ায়। তাঁর দাদা গৌতম জানান, এগারো বছর আগেই ব্রতীন গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। প্রতি বছর পরিবারের দুর্গাপুজোয় যোগ দিতে আসেন তিনি।

(তথ্য সহায়তা: সুব্রত সীট)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Jha Raniganj coal mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE