Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওঝাদের শিখিয়েই প্রচার

মাসখানেক আগে বর্ধমান শহরের কাছে হাটশিমুল গ্রামের এক মহিলাকে ওঝা ডেকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হয়। কিছুদিন পরে অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘরে ফেরেন তিনি।

সংস্কৃতি মঞ্চে সচেতনতা সভায় আদিবাসীদের নাচ। নিজস্ব চিত্র।

সংস্কৃতি মঞ্চে সচেতনতা সভায় আদিবাসীদের নাচ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

মাসখানেক আগে বর্ধমান শহরের কাছে হাটশিমুল গ্রামের এক মহিলাকে ওঝা ডেকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হয়। কিছুদিন পরে অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘরে ফেরেন তিনি।

মেমারির একটি গ্রামেও আড়াই বছর ধরে ১৭ জনের একটি পরিবারকে ‘ভূতে ধরেছে’ বলে ওঝার পরামর্শে বাড়িছাড়া করে রেখেছিলেন গ্রামের অন্য বাসিন্দারা।

রায়নার সেহরাবাজারে একটি পরিবারের তিন জনকে সাপে ছোবল মারে। দশ কিলোমিটারের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তিনজনেই মারা যান।

তিনটে ঘটনায় বলে দিচ্ছে বর্ধমানের বাস্তব পরিস্থিতি। প্রতিটি ঘটনা সামনে আসার পরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এ বার তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিটি ব্লক থেকে আদিবাসী সমাজের মোড়লদের ডেকে আলোচনা করা হবে। আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাঁদের ভুল ধ্যানধারণা, কুসংস্কার ভাঙার চেষ্টা করবেন। সেই মতো মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের সংস্কৃতি মঞ্চে প্রায় সাড়ে ছ’শো প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আলোচনাসভা হয়। জেলার প্রতিটি ব্লক থেকে ২০ জন করে মোড়ল হাজির ছিলেন সেখানে। জানা গিয়েছে, সভায় খুব স্পষ্ট ভাবে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কারে বুঝে বা না বুঝে মদত দেন মোড়লেরা। এ বার আর তা চলবে না। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুও বলেন, ‘‘কোনও রকম কুসংস্কার সমাজে ছড়ানো বা প্রশয় দেওয়া যাবে না। কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা যাবে না। গ্রামে কোনও সমস্যা হলে আইনের মাধ্যমে বা পঞ্চায়েত স্তরে সমাধান করতে হবে।’’ সভায় হাজির বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যোগেন মুর্মুও বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই আদিবাসী সমাজ পিছিয়ে রয়েছে। ফলে কুসংস্কার মাথা চাড়া দিচ্ছে। সমস্যা কাটাতে হলে সবাইকে স্কুলে নিয়ে আসতে হবে।’’

জেলা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দফতর সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে জেলায় সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে ৯৬৮ জনের। তার মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি জনকে ওঝা বা গুণিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দূরত্ব দু-তিন কিলোমিটার। সভায় ওই প্রসঙ্গ তুলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুদীপ মুর্মু বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওঝা-গুণিনের দরজা ঘুরে রোগীকে শেষ মুহূর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সঠিক সময়ে আনা গেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সাপে কাটার ওষুধ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যথেষ্ট পরিমাণে মজুত থাকে।

কর্তাদের কথা শুনে আউশগ্রামের ভালকি গ্রামের হেমেন মণ্ডল, কাঁকসার রঘুনাথপুরের মঙ্গলা মুর্মুরা বলেন, ‘‘আমাদের এত কিছু জানা ছিল না। ফলে নিজেদের মতো বিচার করতাম। যা শুনে গেলাম সমাজে গিয়ে আলোচনা করব।’’ মন্তেশ্বরের বাঘাসন গ্রামের মোড়ল দুখীরাম মুর্মু আবার দাবি করেন, ‘‘গ্রামের মহিলাদের চাপেই আমাদের বিচার করতে হয়। তাঁরা শিক্ষিত হলে কুসংস্কার অনেকটাই কেটে যাবে।’’

জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘এই সব মোড়লদের সামাজিক প্রভাব রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি প্রচার কাজে তাঁদের যুক্ত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shaman Awareness Camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE