E-Paper

উঠে গেল নিয়ন্ত্রণ, দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল শুরু

দক্ষিণবঙ্গের বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জাতীয় সড়ক দিয়ে জল ঢুকছে। তাই তিন দিন ঝাড়খণ্ড সীমানা বন্ধ থাকবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৩
ঝাড়খণ্ডগামী যানবাহন আটকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের সরানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে।

ঝাড়খণ্ডগামী যানবাহন আটকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের সরানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হল। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ পণ্যবাহী যান চলাচলের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয় বলে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জাতীয় সড়ক দিয়ে জল ঢুকছে। তাই তিন দিন ঝাড়খণ্ড সীমানা বন্ধ থাকবে। তাঁর কথায়, “গাড়ি ঢুকলেই জলে ডুবে যাবে, এটা আমি চাই না।” এর পরেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পশ্চিম বর্ধমানের সীমানা দিয়ে এ রাজ্যে পণ্যবাহী যানবাহন ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গাড়িগুলিকে ঝাড়খণ্ডে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ঝাড়খণ্ডের নিরশা, কুমারডুবি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকে। নিয়ন্ত্রণ না ওঠায় শুক্রবারও ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পারেনি কোনও পণ্যবাহী ট্রাক। পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহি সীমানায় চেকপোস্ট লাগোয়া কয়েক হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ি নিয়ে ঢুকতে না পারার জন্য চালকেরা বিক্ষোভ দেখান। দুপুরের দিকে কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার চেকপোস্টে গিয়ে চালকদের বিক্ষোভে শামিল হন। জোর করে ট্রাক চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। অবস্থা সামাল দিতে চোকপোস্টে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাল্টা ঝাড়খণ্ডগামী সমস্ত যানবাহন আটকে দেন সেখানকার এমসিসি দলের কর্মীদের একাংশ।

শুক্রবার সকালের দিকে ডুবুরডিহি চেকপোস্টে দেখা যায়, ঝাড়খণ্ডের দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়েছে। যানজটে পড়েছে ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা। ছোট গাড়ি এমনকি, অ্যাম্বুল্যান্সের যাতায়াতও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিক ও পুলিশ ডুবুরডিহিতে এসে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন। পশ্চিমবঙ্গগামী ট্রাকগুলি ছাড়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। তবে আপৎকালীন পরিষেবা যেন বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাককে ছাড় দেওয়া ও ছোট গাড়ি চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়নি বলে দাবি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের। ঝাড়খণ্ডের এগারাকুণ্ডের বিডিও মধু কুমারী বলেন, “সীমানায় প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে।”

পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন চালক, খালাসিরা। হিমাচলপ্রদেশ থেকে আপেল ও নাশপাতি নিয়ে বুধবার রওনা দিয়েছিলেন মহম্মদ নবাব। তিনি বলেন, “শুক্রবার কাটোয়ার বাজারে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় ফল পচতে শুরু করেছে।” উত্তরপ্রদেশের বৈরাচ থেকে ছাগল নিয়ে বৃহস্পতিবার রওনা দিয়েছিলেন মহম্মদ মেহেতাব। তাঁর কথায়, “আজ, শনিবার গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু জানি না এখন কী হবে।” তাঁর দাবি, রোদের মধ্যে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় পশুগুলি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনটি পশু মারা গিয়েছে। দুর্গাপুর স্টিল কারখানায় ব্যবহারের জন্য ব্লিচিং পাউডার ভর্তি ট্রাক নিয়ে বেরিয়েছিলেন ফিরোজ খান। তাঁর দাবি, “এটি অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবুও আটকে দেওয়া হয়েছে।” ট্রাক চালকদের অভিযোগ, আচমকা এ ভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় তাঁদের খাবারেরও সমস্যা হয়। রাস্তায় কোনও ভাবে রান্না করতে হচ্ছে।

বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ডিসি (ট্র্যাফিক) পিভিজি সতীশ-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। সন্ধ্যার দিকে জট কাটে। পুলিশ জানায়, প্রয়োজনীয় নির্দেশ আসার পরে যান চলাচলের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়।

বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার বলেন, “আর জি কর কাণ্ডের জেরে সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতে এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, এর সঙ্গে আর জি কার কাণ্ডের কোনও সম্পর্ক নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Asansol protests Vehicles

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy