মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসনির সভার খরচ কমানোর উপরে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাহুল্য বর্জন করে ন্যূনতম পরিকাঠামোর খরচে এই সব সভা আয়োজনের ব্যবস্থার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এই খরচে লাগাম টানা যে সম্ভব, তা হাতেকলমে দেখাল পূর্ব বর্ধমান জেলা।
প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক ভিডিয়ো-বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক জনসভা বা সরকারি বৈঠকে খরচ নিয়ন্ত্রণের বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই গত বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা ছিল তাঁর। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন এই সভায় ম্যারাপ-মঞ্চ-বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম-আলো লাগানোর খরচ এক ধাক্কায় ৭৫% কমিয়েছে। এ ছাড়া, খাবার এবং যাতায়াতের খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ করেছে। সব মিলিয়ে, প্রশাসনিক জনসভার জন্য আগের তুলনায় ৬০% খরচ কমানো গিয়েছে এ বারের সভায়।
কী ভাবে তা সম্ভব হল?
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার পরিকাঠামোগত কাজ দেখে রাজ্য পূর্ত দফতর। তাদের নির্ধারিত সূচিতে থাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে দরপত্র ডাকার ফলে মঞ্চ পরিকাঠামোর খরচ তিন কোটি টাকার কাছে পৌঁছেছিল। যদিও বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ার পরে সে খরচ দু’কোটি টাকা দাঁড়ায়। প্রশাসনিক সভার খরচ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘উষ্মার’ পরেই জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়। পূর্ত দফতরের হাত থেকে মঞ্চ পরিকাঠামো-সহ সভার যাবতীয় কাজের দায়িত্ব নেয় জেলাশাসকের দফতর। বিভিন্ন ডেকরেটরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোদায় মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল ছিল ৮,১০০ বর্গ মিটারের। এ ছাড়া, প্রায় ১,৫০০ বর্গমিটারের মঞ্চের এলাকা, মুখ্যমন্ত্রী ও আমলাদের জন্য বসার জায়গা, আলো-বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের প্রতিটি বিষয় নিয়ে চন্দননগর, কলকাতা, পূর্বস্থলী, হুগলির গুপ্তিপাড়া, আসানসোল, বর্ধমান-সহ নানা জায়গার ডেকরেটরদের সঙ্গে জেলাশাসক কথা বলেন। বেশ কয়েকটি ডেকরেটরের মালিককে এক সঙ্গে ডেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন। তাতে খরচ সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয় জেলা প্রশাসনের।
নবান্নের এক কর্তার দাবি, “খরচ কমানো যাবে কি না, সে নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। আমরা ব্যবস্থা করে দেব বলে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসন খরচ কমানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিল। ‘কোটেশন’ নেওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে ম্যারাপ, মঞ্চ, বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের জন্য খরচ হয়েছে ৫২ লক্ষ টাকা।” এ ছাড়া, গত বছর উপভোক্তাদের বাসে করে নিয়ে আসার জন্য প্রায় সওয়া এক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এ বার ৪৭০টি বাসের জন্য খরচ হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকার মতো। জলখাবার, দুপুরের খাবার খরচও প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকার মতো হয়েছিল। সেটাও নেমে এসেছে ২২ লক্ষ টাকায়।
এক কর্তার কথায়, “কিছু জেলায় আগের কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠক বাবদ কয়েক কোটি করে অর্থ বকেয়া রয়েছে। তা ঠিকাদারদের মেটানোর কথা। সেই তথ্য জেনেই মুখ্যমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধের ব্যাপারে প্রত্যেককে সতর্ক করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা প্রাধান্য দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা খরচের বাহুল্য কমানোয় সফল হয়েছে।”
পূর্ত দফতরের কর্তারা জানান, নির্ধারিত সূচির বাইরে তাঁদের পক্ষে দরপত্র ডাকা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছানুসারে মণ্ডপ পরিকাঠামোয় প্রতিটি জেলা যাতে স্বনির্ভর হতে পারে, সে দিকে নজর দেওয়া শুরু হয়েছে। তাতে পরিবহণ খরচ এক ধাক্কায় কমে যাবে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি শুধু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সব স্তরের আধিকারিক ও কর্মীদের সহযোগিতায় উদ্যোগ হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy