Advertisement
E-Paper

এক ফোনেই নিশি-ঠেকে আসছে ‘ভাই’

ঠিক মিনিট পনেরোর মাথায় দোকানের সামনে চলে এলেন এক মোটরবাইক আরোহী। চোখের নিমেষে হাতবদল হল ‘ভাই’য়ের। ভাই অর্থাৎ কাগজে মোড়া বোতল। — পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালনা শহর জুড়়ে এ ভাবেই চলছে মদের ‘হোম ডেলিভারি’।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০১:০৭

রাত সাড়ে ৮টা। একটি দোকান থেকে টেলিফোনে স্রেফ তিনটি শব্দ খরচ করলেন এক যুবক, ‘একটা ছোট ভাই।’ ঠিক মিনিট পনেরোর মাথায় দোকানের সামনে চলে এলেন এক মোটরবাইক আরোহী। চোখের নিমেষে হাতবদল হল ‘ভাই’য়ের। ভাই অর্থাৎ কাগজে মোড়া বোতল। — পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালনা শহর জুড়়ে এ ভাবেই চলছে মদের ‘হোম ডেলিভারি’।

আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, কালনা শহর ও লাগোয়া এলাকায় রয়েছে সরকার অনুমোদিত পাঁচটি মদের দোকান। এর পরেও বেআইনি কারবারিদের রমরমা কেন? একাধিক ‘ক্রেতা’ জানান, প্রথমত এ ক্ষেত্রে যে ঘরে বা ‘নিশি-ঠেকে’ বসেই মদ পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট সময়ের পরে বৈধ দোকানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ‘ডেলিভারি’ মেলে গভীর রাত পর্যন্তও। তৃতীয়ত, দোকানে গিয়ে মদ কেনার অনেক হ্যাপা। সে ক্ষেত্রে চেনা লোকজনের সঙ্গে দেখা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই ‘বিপদ’ একেবারেই নেই। ফলে কলেজ পড়ুয়া হোক বা সাধারণ গৃহস্থ, অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের ডেলিভারির চাহিদা রয়েছে ভালই। একই ঠেকে একাধিকবার যেতেও আপত্তি থাকে না বিক্রেতাদের।

জানা গিয়েছে, ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে নানা কিসিমের, হরেক ‘ব্র্যান্ডে’র মদের জোগান তো রয়েইছে। সঙ্গে আসরের সঙ্গত দিতে ঠান্ডা জল, হরেক চাটও মিলছে হাতের নাগালে। তবে এ ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু কড়ি গুনতে হয় বলেই জানালেন ক্রেতারা। তাঁরা জানান, বাজার চলতি দামের তুলনায় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি দর দিতে হয় ‘পরিষেবা’র জন্য।

তবে ‘ডেলিভারি’ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা রয়েছে বলেই জানা যায়। কালনা শহরে বেআইনি মদের কারবার চালানো এক যুবক জানান, তাঁর কাছে নির্দিষ্ট কিছু চেনা ক্রেতা রয়েছে। তাদের নম্বরও ‘সেভ’ করা আছে মোবাইলে। ফলে তাঁদের কাছে ‘ডেলিভারি’ দেওয়ার জন্য স্রেফ ওই তিন শব্দের ইঙ্গিতটুকুই যথেষ্ট। কেমন সে ইঙ্গিত? ছোট বোতলের নাম, ‘ছোট ভাই’। একই সূত্রে মাঝারি ও বড় বোতলের নাম ‘মেজো ভাই’, ‘বড় ভাই’ ইত্যাদি। রাত ঘনালে বহু ঠেকে এই ভাইদের চাহিদাও বাড়ে।

কিন্তু মদের ‘হোম ডেলিভারি’-র পৌষমাস হলেও, এই ‘প্রবণতা’ শহরের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে বলেই জানান কালনার নাগরিকেরা। কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এমন কারবারের জেরে বহু পড়ুয়া বিপথগামী হচ্ছে বলেও খবর পেয়েছি। তারা স্কুলে না এসে নেশার খপ্পরে প়়ড়ছে। স্কুলের তরফে বিষয়টি প্রশাসনেরও নজরে আনা হয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, শহরের বহু ছোট দোকান থেকেও এখন মিলছে মদ।

এর ফলে শহরের পথ-নিরাপত্তাও বিপদে পড়ছে বলে জানা গিয়েছে। পেটে ‘দু’পাত্তর’ পড়লেই এক শ্রেণির যুবক মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে পথে নামছেন। চলছে গতির ধুম। কালনার বাসিন্দা নির্মল মজুমদারের ক্ষোভ, ‘‘মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’

যদিও মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘বেআইনি মদের কারবারিদের ধরতে প্রশাসন খুব দ্রুত কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে।’’

Alcohol Home Delivery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy