Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দ্বিগুণ দাম শোলার, সঙ্কটে শিল্প

তাঁদের দাবি, কয়েক বছর ধরেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। খালবিলে জল কমায় প্রায় বন্ধ শোলা চাষ। ফলে হয় মজুত শোলায় কাজ চালাতে হচ্ছে, নাহলে চড়া দামে তা কেনা ছাড়া উপায় থাকছে না।  

শোলার সাজ তৈরি করছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

শোলার সাজ তৈরি করছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায় 
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

সরকারি একাধিক প্রকল্প রয়েছে তাঁদের জন্য। কিন্তু শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল যে শোলা, তারই জোগান নেই দাবি মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলাশিল্পীদের।

তাঁদের দাবি, কয়েক বছর ধরেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। খালবিলে জল কমায় প্রায় বন্ধ শোলা চাষ। ফলে হয় মজুত শোলায় কাজ চালাতে হচ্ছে, নাহলে চড়া দামে তা কেনা ছাড়া উপায় থাকছে না।

এই গ্রামের প্রায় শ’তিনেক পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় তিরিশটি কারখানা রয়েছে। বাড়িতেও শোলার কাজ করেন অনেকে। বাইরে থেকেও অনেকে আসেন কাজ শিখতে। শোলাশিল্পী হরগোপাল সাহা, বুদ্ধদেব সাহারা জানান, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার কাছে জলাজমি, বিলে শোলা চাষ হয়। কিন্তু এখন ওই সমস্ত বিল বুজিয়ে চাষ অথবা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া বৃষ্টি সে ভাবে না হওয়ায় অনেক জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে হয় শোলা চাষ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, না হলেও উৎপাদন কমেছে, দাবি তাঁদের। শোলার মানও খারাপ হয়েছে আগের থেকে, জানান আর এক শিল্পী শীতল মাঝি। তাঁদের আর্জি, সরকার ভাবে শোলা চাষের ব্যবস্থা করা হোক।

শিল্পীদের দাবি, ভাল শোলা মোটা, নরম ও ধবধবে সাদা হয়। সে ক্ষেত্রে সহজে উপরের খোলা ছাড়িয়ে সূক্ষ কাজ করা যায়। কিন্তু জল না পেয়ে শোলা শক্ত ও লালচে হয়ে যাচ্ছে। ফলে কাজ করতে গেলেই ভেঙে যাচ্ছে। নরম শোলা ছাড়া ভাল মডেলও তৈরি করা যায় না, দাবি তাঁদের। শোলাচাষিরা জানান, পুজোর মরসুমে কাজের জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে শোলার চাষ শুরু হয়। ভাদ্র মাসের মধ্যে নতুন শোলা বাজারে এসে যায়। কিন্তু এ বছর আমদানি সে ভাবে নেই। ফলে মজুত করা শোলা দিয়েই প্রতিমার সাজ বা অন্য উপকরণ তৈরি করছেন তাঁরা। শিল্পীদের দাবি, যে সমস্ত কারখানা বা শিল্পীদের কাছে শোলা মজুত নেই, তাঁদের দ্বিগুন দাম দিয়ে শোলা কিনতে হচ্ছে। বছর খানেক আগে ৫০ গাছার এক বান্ডিল শোলা ৩০০ টাকায় মিলত, তা এখন ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। হরগোপালবাবু জানান, মূলত কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাজ বিক্রি করেন তাঁরা। বিভিন্ন ক্লাব থেকেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু খরচ বাড়লেও কাজের দাম না বাড়ায় মুশকিল বেড়েছে।

তিনি জানান, সাধারণত বৈশাখ থেকে কাজের বরাত আসতে থাকে। রথ পর্যন্ত বরাত নেওয়া হয়। রাজ্যের বাইরে থেকেও কাজের বরাত আসে। কিন্তু এ বছর কোনও বড় বরাত আসেনি, দাবি তাঁদের। শোলা কারখানার মালিকদেরও দাবি, অন্য বছর কারখানার লোকজনের সঙ্গে বাড়ির মেয়ে-বৌরাও কাজে হাত লাগাতে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন চললে শোলার কাজের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখা মুশকিল, দাবি তাঁদের।

কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পালের আশ্বাস, শোলাশিল্পীদের সমস্যার কথা জানতে খুব শীঘ্র সভা করা হবে। শিল্পীদের কাছে থেকে কোনও প্রস্তাব এলে ভেবে দেখারও আশ্বাস দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Industry thermocol Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE