Advertisement
১৭ মে ২০২৪

‘রোগা হয়ে যাচ্ছি, অসুস্থ’, তিহাড় থেকে আসানসোল ফিরতে চাওয়া কেষ্টর আর্জি শুনলই না আদালত

গরু পাচার মামলায় প্রথমে সিবিআই এবং পরে ইডির হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত মণ্ডল। এখন তিনি তিহাড় জেলে বন্দি। তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল, প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেনও তিহাড় জেলে রয়েছেন।

Anubrata Mondal

অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১৩
Share: Save:

শরীর অসুস্থ। রোগা হয়ে যাচ্ছেন। তাই দিল্লির তিহাড় জেল থেকে আসানসোলের সংশোধনাগারে তাঁকে ফেরানো হোক। বার বার এমনই আবেদন করেছিলেন গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। একই আর্জি নিয়ে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে আবেদন করেছিলেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রতের প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেন। সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। উল্টে ইডির করা আবেদনের ভিত্তিতে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে থাকা মামলা স্থানান্তরিত হয়ে গেল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে। ফলে গরু পাচার সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানি হবে দিল্লিতেই। অন্য দিকে, অনুব্রতেরা বাংলায় কবে ফিরতে পারবেন, তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে। বিচারকের পরবর্তী রায়দানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাঁদের।

গরু পাচার মামলা আসানসোল থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের জন্য গত ২৮ জুলাই আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে আবেদন করে ইডি। কিন্তু দু’বারই সেই আর্জি মুলতুবি রাখে আদালত। পাশাপাশি, কেন ইডি আসানসোল থেকে দিল্লিতে এই মামলা সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, সেই প্রশ্ন করেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। গত শনিবার এই মামলার শুনানিতে আদালত বলে, ‘‘কোনও মামলা কি ইচ্ছে করলেই যে কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি, যে কোনও রাজ্যের আদালতে নিয়ে যেতে পারে?’’ আদালত আরও বলে, ‘‘পিএমএলএ বা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের মামলা যে ইডি করবে, তার সরকারি নির্দেশ বা গেজেট নোটিফিকেশন কি ইডির কাছে আছে?’’ তার প্রেক্ষিতে ইডির আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র আইনের একাধিক ধারার উল্লেখ করে আবেদনের পক্ষে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন। বিরোধিতা করেন অনুব্রতের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু এবং আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ। সে বার শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু বুধবার ইডির আবেদনই মেনে নিল আদালত। গরু পাচার মামলা আসানসোল সিবিআই আদালত থেকে স্থানান্তরিত হল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে।

আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারক গত দু’বারের শুনানিতে ইডির আইনজীবীর কাছে যে তথ্য দেখতে চান, বুধবার সেই সব তথ্য পেশ করেন ইডির আইনজীবী। ২০০৫ সালের ১ জুলাই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তি পেশ করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নেমে ৪৪/১সি ধারায় মামলা স্থানান্তরের আবেদন করতেই পারে ইডি। আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন অনুব্রতের আইনজীবী। তিনি আবেদন করেন, সিবিআইয়ের করা মামলা যত দিন না শেষ হচ্ছে, তত দিন যেন এই আবেদন স্থগিত রাখা হয়। দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক ইডির পক্ষেই রায় দেন। রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে গরু পাচার মামলা স্থানান্তরিত করার পাশাপাশি, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত তথ্য দিল্লির আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক চক্রবর্তী।

উল্লেখ্য, গরু পাচার মামলায় প্রথমে সিবিআই এবং পরে ইডির হাতে গ্রেফতার হন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। এখন তিনি দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি। পাশাপাশি তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল, প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেনও তিহাড় জেলে রয়েছেন। একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন এনামুল হক এবং বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার।

বুধবারের শুনানি শেষে অনুব্রতের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন, ‘‘আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালত থেকে মামলা দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিল ইডি। দিল্লিতে এই মামলা সরে গেলে সবারই সমস্যা হবে। সিবিআইয়ের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মামলা আসানসোলের আদালতে যাতে থাকে, তার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিচারক মামলা স্থানান্তরের পক্ষেই রায় দেন।’’ আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE