Advertisement
E-Paper

কর্মকাণ্ড দেখে সন্দেহ হয়নি, দাবি ক্রেতাদের

দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘খোসলা কা ঘোসলা’ ছবির এই কাহিনিই যেন একটু অন্য ভাবে দেখা গেল আসানসোলের ‘জমি প্রতারণা’য়।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১১
এই জমি নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

এই জমি নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

কমল কিশোর খোসলা জমি কিনেছেন। কিন্তু সেখানে জবরদখল করে বসে আছে কিষেণ খুরানা। খুরানাকে ‘টুপি’ পরাতে মৎস্য দফতরের জমিকে নিজেদের জমি দেখিয়ে তা বিক্রি করা হয় খুরানাকে! দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘খোসলা কা ঘোসলা’ ছবির এই কাহিনিই যেন একটু অন্য ভাবে দেখা গেল আসানসোলের ‘জমি প্রতারণা’য়, বলছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশ। এ ক্ষেত্রেও খাসজমিই বিক্রি করা হয়েছে ক্রেতাদের, জানিয়েছে প্রশাসন।

সম্প্রতি জমি কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবিতে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈনের দ্বারস্থ হন শহরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা দুর্গাপুরের একটি আবাসন সংস্থার বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) খুরশিদ আলি কাদরি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই জমি খাসজমি। ক্রেতারা প্রতারিত হয়েছেন। আগামী দিনে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঠেকাতে দফতর পদক্ষেপ করবে।’’

কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, ক্রেতাদের সঙ্গে সংস্থাটির যোগাযোগ হল কী ভাবে, কেনই বা বিশ্বাস করা হল, জমির নথিপত্র খতিয়ে দেখা হল না কেন, যাঁদের জমির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, তা-ই বা হল কী ভাবে।

‘প্রতারিতেরা’ জানান, প্রতারণার ‘টোপ’ ভাল ভাবেই পেতেছিল সংস্থাটি। আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ নামে এক জন জানান, প্রথমে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে তাঁরা দেখেন, গাড়ুই লাগোয়া এলাকায় তিন কাঠার ‘প্লট’ বিক্রি করছে সংস্থাটি। তার পরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইট বিছিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। সীমানা পাঁচিল তোলা হচ্ছে। এমনকি, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে জমি সমতলও করা হচ্ছে! এমন কর্মকাণ্ড দেখেই আর সন্দেহ হয়নি, দাবি চিত্তরঞ্জনবাবু-সহ অন্য ‘ক্রেতাদের’ একাংশের। তা ছাড়া, দুর্গাপুরের সঞ্জীব সরণির এসবি মোড়ে সংস্থাটির অফিসে গিয়ে সেখানকার কর্মী ও আধিকারিকদের ব্যবহার দেখে ঘুণাক্ষরেও প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা হয়নি, জানান ক্রেতাদের একাংশ। ফলে, জমির নথিপত্রও তাঁরা খতিয়ে দেখেননি।

অভিযোগকারীরা জানান, তিন কাঠা করে প্লটের দাম পড়েছিল প্রায় ছ’লক্ষ টাকা। প্রায় বারোশো জন সেই জমি কেনেন। শ’তিনেক ক্রেতার জমি ‘রেজিস্ট্রেশন’ হয়েছে। কিন্তু ‘মিউটেশন’ করাতে গিয়েই প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। চিত্তরঞ্জনবাবুর দাবি, ‘‘২০১৩-র শেষে আমার নামে ‘প্লট’ রেজিস্ট্রি হয়। কিন্তু ২০১৬-র গোড়ায় বাড়ি তোলার আগে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে মিউটেশন করাতে গেলে জানতে পারি, তা হবে না। কারণ, ওই সংস্থার নামে নয়, বরং অন্য এক জনের নামে জমির রেকর্ড রয়েছে।’’ এর পরে ওই সংস্থার অফিসে গিয়েও টাকা ফেরত বা জমি-জট কাটা, কোনওটাই হয়নি বলে অভিযোগ চিত্তরঞ্জনবাবুর। একই অভিযোগ আসানসোলের বাসিন্দা ইসিএল কর্মী পরিতোষ নন্দীরও। এ দিকে, জমি রেজিস্ট্রিও না হওয়ায় প্রাক্তন রেলকর্মী যোগেশ্বর প্রসাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী ঊমাদেবী। রেলকর্মী চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা রমেশকুমার গুপ্তর আক্ষেপ, ‘‘টাকা, জমি সব গেল। এখন তো ওই সংস্থাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।’’

জমির ‘বায়না’ করার ক্ষেত্রেও নিপুণ ফাঁদ পাতে সংস্থাটি, অভিযোগ ক্রেতাদের। তাঁরা জানান, জমির বায়না করার সময়ে একটি ছাপা আবেদনপত্র ভর্তি করে সই করানো হয়। জমির মোট দামের অগ্রিম বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সংস্থার নামে চেকের মাধ্যমে নেওয়া হয়। তা নেওয়ার পরে, সংস্থার নামে দশ টাকার একটি স্ট্যাম্প পেপারে জমি কেনা-বেচার লিখিত চুক্তিপত্র ক্রেতাদের দেওয়া হয়। জমির দামের বাকি কিস্তি পরিশোধের পরে সংস্থার দেওয়া চুক্তিপত্র ক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ে ক্রেতাদের নামে রেজিস্ট্রি করানো হয়।

কিন্তু রেজিস্ট্রেশনই বা হল কী করে? আসানসোল রেজিস্ট্রি অফিসের নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী, আধিকারিকদের একাংশের অনুমান, ‘ভুয়ো’ দলিল দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করায় সংস্থাটি। প্রাথমিক ভাবে তা বোঝা যায়নি।

Asansol Vested Land Fraud Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy