Advertisement
E-Paper

দেবীর কাছে প্রার্থনা, বাঁচুক বেকারি শিল্প

সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে তিন হাজার ছোট বেকারি রয়েছে। আগে বেকারি শিল্পে কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে বার্ষিক দু’কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনে পাঁচ শতাংশ কর দিতে হত।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৪২
আসানসোলের একটি বেকারিতে। নিজস্ব চিত্র

আসানসোলের একটি বেকারিতে। নিজস্ব চিত্র

জিএসটি-র প্রভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এর জেরে সমস্যায় পড়েছে বেকারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন। শারদ-মরসুমে তাঁরা জানাচ্ছেন, গত দু’বছরে তাঁদের বিক্রি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অভিযোগ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পুজোর মুখেও তাঁরা সমস্যায় বলে জানাচ্ছেন।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে তিন হাজার ছোট বেকারি রয়েছে। আগে বেকারি শিল্পে কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে বার্ষিক দু’কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনে পাঁচ শতাংশ কর দিতে হত। তার বেশি হলে, ১২ শতাংশ কর দিতে হত। জিএসটি যোগ হওয়ার পরে বেশির ভাগ কাঁচামালের দাম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। ময়দার কুইন্টাল প্রতি দর গত দু’বছরে সাতশো, মারজারিন কেজি প্রতি ৪৬, তেল কেজি প্রতি ৬২, চকোলেট কেজি প্রতি ৩০ টাকা করে অন্তত দাম বেড়েছে। এ ছাড়া, প্যাকেজ়িং সামগ্রীর দাম বেড়েছে অন্তত আট শতাংশ।

সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জানান, বেকারি শিল্পের জন্য ১৮ ধরনের ছাড়পত্র নিতে হয়। তা ‘এক জানলা’ পদ্ধতিতে মেলে না বলে সমস্যা হচ্ছে। আরিফুল বলেন, “রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি, ক্ষুদ্র বেকারিগুলিকে বাঁচাতে রাজ্যের পৃথক একটি প্রকল্প ঘোষণা করা উচিত। তা না হলে, পুরো শিল্পটিতে শুধু বড় শিল্পোদ্যোগীদেরই প্রাধান্য থাকবে।”

সমস্যার কথা জানাচ্ছেন বেকারি মালিকেরা। তেমনই কয়েক জন বাঁকুড়ার শুভেন্দু সিংহ, দুর্গাপুরের সুমেশ বাজাজ, আসানসোলের ভরত কুমারেরা বলেন, “দু’বছরের বিক্রিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। প্রান্তিক এলাকার বেকারি-ব্যবসায়ীরা জিএসটি দিতে পারছেন না। সেই চাপ এসে পড়ে আমাদের উপরে। সেই সঙ্গে কাঁচামালের দাম আকাশ ছোঁয়া।” তাঁদের সবারই একটাই কথা, “এ বছর দেবী দুর্গার কাছে একটাই প্রার্থনা, আমাদের শিল্পটা যাতে বাঁচে। কারণ ছোট বেকারিগুলি পর পর বন্ধওহয়ে যাচ্ছে।”

আসানসোলের বেশ কয়েকটি বিস্কুট কারখানার পরামর্শদাতা সন্দীপ শর্মা বলেন, “পশ্চিম বর্ধমানে ১২টি বিস্কুট কারখানা ছিল। তার মধ্যে আটটি চলছে। তার মধ্যে আবার চারটি দেশের বৃহৎ বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি নিয়ে চালানো হচ্ছে।” ইস্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত একটি বহুজাতিক সংস্থার পূর্বাঞ্চল শাখার প্রধান দেবাশিস দাস জানাচ্ছেন, পশ্চিম বর্ধমানে গত দু’বছরে উৎপাদিত সামগ্রী সরবরাহ অন্তত ৪০ শতাংশ কমেছে।

এ ছাড়া, আরও একটি সমস্যা রয়েছে বলে বেকারি মালিকেরা জানাচ্ছেন। তাঁরা জানান, এখন দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে বেকারির জিনিসপত্র বানিয়ে পাড়ায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই সব সামগ্রীর দাম তুলনায় কম। ফলে, বেকারি শিল্প থেকে আসা জিনিসপত্রের বিক্রি মার খাচ্ছে।

সামগ্রিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “ছোট বেকারিগুলির সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে ক্যাবিনেট বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, প্রথম ধাপে বেকারিগুলিকে আধুনিক যন্ত্র কেনায় রাজ্য সরকার ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেবে। এ ছাড়া, অন্য বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধানকরা হবে।”

Bakery Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy