বাঁশের ঝুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত এক মহিলা। ডাঙ্গাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগে নাওয়াখাওয়ার সময় কার্যত থাকে না পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের ডাঙ্গাল গ্রামের মাহালীপাড়ায়। এই পাড়ার বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা বাঁশের সামগ্রী তৈরি। তাঁরা জানান, শারদ-মরসুমে বাঁশের ঝুড়ি, কুলো-সহ নানা কিছু তৈরির বরাত মেলে। কিন্তু বাঁশের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে তাঁরা আর্থিক সমস্যায় পড়ছেন। সে সঙ্গে তাঁরা দাবি সরকারি অনুদানের দাবিও জানিয়েছেন।
ওই পাড়ায় ৬০টি পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বর্ষায় তাঁরা চাষাবাদ করলেও, বাড়ির ছেলেমেয়েরা সবাই বছরভর বাঁশের সামগ্রী তৈরি করেন। সারাবছরই পুজো-সহ নানা কাজের জন্য বিভিন্ন মাপের ঝুড়ি, কুলো, ফুলের সাজি প্রভৃতির চাহিদা থাকে। এই কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আনন্দ মাহালী। তিনি জানান, এলাকায় এসে মহাজনেরা কাজের বরাত দিয়ে যান। সেই মতো সামগ্রী তৈরি করেন তাঁরা। আবার অনেক সময় নিজেদের মতো করেও সামগ্রী তৈরি করা হয়।প্রায় সবই বিক্রি হয়ে যায়। আনন্দ বলেন, “দুর্গাপুজোর সময়ে সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে। ছট পুজো পর্যন্ত এই চাহিদা থাকে। গত দু’বছর করোনার কারণে সমস্যা হয়েছিল।এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল।”
পরিস্থিতি যে ভাল, তা জানা গিয়েছে এলাকারই বাসিন্দা সুমিত্রা মাহালীর সঙ্গে কথা বলেও। তিনি জানান, এ বার এখনও পর্যন্ত একশোটি ঝুড়ি তৈরির বরাত পেয়েছেন। মাপ অনুযায়ী, ঝুড়ি প্রতি রোজগার দশ থেকে ৫০ টাকা।
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। স্থানীয় বাসিন্দা শিবলাল মুর্মু বলেন, “আমাদের কাজের জন্য বাঁশ কিনতেই হবে। ভাল গুণমানের একটি বাঁশের দর প্রায় একশো টাকা।” অথচ, গত দু’-তিন বছর আগেও একটি ভাল বাঁশের দর ছিল ৫০-৬০ টাকার আশপাশে। তাই এই কাজের চাহিদা থাকলেও, আদতে হাতে কিছু থাকছে না। তা ছাড়া, পুরোটাই নির্ভর করছে মহাজনদের উপরে। মাহালীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে নানা মাপের একশোটি ঝুড়ি তৈরি করে তা বাজারজাত করা গেলে, হাতে থাকছে দেড় হাজার টাকার মতো। ঘটনাচক্রে, দু’-তিন বছর আগেও তা-ই থাকত। ফলে, বাঁশের দর বাড়লেও মাহালীদের তৈরি শিল্প সামগ্রীর দাম খুব একটা বাড়েনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে এটাই প্রধান সমস্যা বলেজানাচ্ছেন মাহালীরা।
এই পরিস্থিতিতে মহালীদের দাবি, তাঁদের সামগ্রী বিক্রি করার জন্য একটি স্থায়ী বাজার তৈরি হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। পাশাপাশি, শিবলাল বলছেন, “বছরের পর বছর আমরা এই কাজ করছি। কিন্তু এই শিল্পকে ভবিষ্যতে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে দরকারসরকারি অনুদান।”
পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমীর বিশ্বাস বলেন, “সমস্যার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। ওই শিল্পীদের কোনও ভাবে সরকারি সাহায্যের আওতায় আনা যায় কি না, তা-ও অবশ্যই খতিয়েদেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy