Advertisement
E-Paper

ফলে গোলমাল নিয়ে অবরোধ দফায়-দফায়

দেরিতে ফলপ্রকাশ ও তাতে অজস্র ভুলের অভিযোগে বারবার বিক্ষোভ, সমাবেশ চলছিলই, এ বার দফায় দফায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবরোধ করলেন পড়ুয়ারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও বিভিন্ন রাস্তার অবরোধে ঘণ্টা দেড়েকের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহর। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমান ও আশপাশের নানা কলেজের শ’দেড়েক পড়ুয়া বর্ধমান স্টেশনে জড়ো ‌হন। তারপরে জিটি রোড ধরে মিছিল করে কার্জন গেট চত্বরে দিকে এগোতে শুরু করেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৪
বাঁ দিকে, কার্জন গেট চত্বরে চলছে অবরোধ। ডান দিকে, জিটি রোড ধরে মিছিল করে আসছেন পড়ুয়ারা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

বাঁ দিকে, কার্জন গেট চত্বরে চলছে অবরোধ। ডান দিকে, জিটি রোড ধরে মিছিল করে আসছেন পড়ুয়ারা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

দেরিতে ফলপ্রকাশ ও তাতে অজস্র ভুলের অভিযোগে বারবার বিক্ষোভ, সমাবেশ চলছিলই, এ বার দফায় দফায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবরোধ করলেন পড়ুয়ারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও বিভিন্ন রাস্তার অবরোধে ঘণ্টা দেড়েকের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহর।

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমান ও আশপাশের নানা কলেজের শ’দেড়েক পড়ুয়া বর্ধমান স্টেশনে জড়ো ‌হন। তারপরে জিটি রোড ধরে মিছিল করে কার্জন গেট চত্বরে দিকে এগোতে শুরু করেন তাঁরা। কখনও শ্লোগান, কখনও গানে ‘হোক প্রতিবাদ’ ব্যানারে রাস্তা জুড়ে চলা মিছিলটি জিটি রোডকে কার্যত অবরুদ্ধ করে দেয়। বিজয়তোরণ এলাকায় পৌঁছে বিসি রোড ও জিটি রোডের সংযোগস্থলে অবরোধ শুরু করে দেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রায় ২০-২৫ মিনিট অবরোধ চলে। তারপরে বিসি রোড ধরে রাজবাড়ির দিকে রওনা হয় মিছিলটি। বিক্ষোভকারী ওই ছাত্রছাত্রীদের দাবি, পুলিশ মাঝপথে, বড়বাজারের কাছে জোর করে আটকে দেয় মিছিলটিকে। যদিও পুলিশের বক্তব্য, একেই চৈত্র সেলের শেষ দু’দিনে ওই রাস্তায় প্রচন্ড ভিড়, তারপর মিছিল গেলে আরও যানজট বাড়বে। সে কারণেই ছাত্রছাত্রীদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে রাজি না হলেও পরে মিছিলের মুখ ঘুরিয়ে কার্জন গেট চত্বরে চলে আসেন। শুরু হয় দ্বিতীয় দফার পথ অবরোধ। এ বারেও আধ ঘণ্টা মতো অবরোধ চলে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, একেই তো পরীক্ষার প্রায় ন’মাস পড়ে ফলপ্রকাশ করা হল। তার উপর বিএসসি ও বিকম পার্ট ২-এর ফলে অজস্র গোলমাল ছিল। মার্কশিট দেওয়া শুরু হতে বিপত্তি আরও বাড়ে। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কেউ দুটো মার্কশিট পেয়েছেন, তার একটায় পাশ অন্যটায় ফেল দেখানো হয়েছে। কেউ ৫০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন অথচ ফলে লেখা রয়েছে অনুত্তীর্ণ। তাছাড়া নামের বানান ভুল তো রয়েইছে। এ নিয়ে ফলাফল বেরোনোর পরেই মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবরোধ করেছিলেন বাম সমর্থিত ছাত্রছাত্রীরা। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সঙ্গে গোলমালও বেধেছিল। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তদন্ত কমিটি গড়ে বিষয়টি দেখা হবে। যে সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেখানে খোঁজ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগের তির ছিল খাতা দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও। বলা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই দেরি করে খাতা জমা দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। যদিও কিছুদিন আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা ওয়েবকুটার বর্ধমান জেলা কমিটি পাল্টা জানিয়ে দেয়, পরীক্ষকদের হাতে খাতা পৌঁছনোর বদলে পাঁচ মাস ধরে খাতা পড়ে ছিল পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দীপক কুমার সোম দাবি করেছিলেন, ‘‘আসলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ামক পদে স্থায়ী কেউ ছিলেন না। তাতেই গোলমাল দেখা দিয়েছে।’’ এরপরেও বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা. এ দিনের অবরোধে দাঁড়িয়ে হুগলি মহসিন কলেজের এক ছাত্র বলেন, “ফলাফলে কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত। ওই ফল বাতিল করে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা উচিত।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা রাজবাটিতে গিয়ে একটি গণ কনভেনশন করতাম। সেই কনভেনশনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদেরও ডাকা হতো। তথ্য জানার জন্য সই সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু পুলিশ আমাদের মাঝপথে আটকে দিয়েছে।”

ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়াও। রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জন নিজেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া দাবি করে বলেন, ‘‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফল নিয়ে তুঘলকী কাণ্ড চলছে। ঠিক সময়ে নির্ভুল ফল বের না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা পরবর্তী পর্যায়ে ভর্তি হতে পারছেন না। তাই পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরাও তাতে সাড়া দিয়েছি।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া রূপকথা ঘোষও একই দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কী ভাবে এই ফলাফল সংশোধিত আকারে প্রকাশ করা যায় তার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। তাই বিপদ বাড়ছে।” তাঁদের আরও দাবি, ‘‘পৌলমী ঘোষ নামে মানকর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ কম্পিউটার সায়েন্সের এক ছাত্রী ‘দু’বার অসম্পূর্ণ ফল বেরোনোয় আত্মঘাতী হয়েছেন।’’

পরে ১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। দু’দফার অবরোধে সপ্তাহের প্রথম দিনে ভোগান্তি হয় জনজীবনে। যানজটে আটকে পড়েন বহু মানুষ।

এ দিকে, ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল নিয়ে অপর একটি কনভেনশন হয় বর্ধমানের গুডসশেড রোডে। ওই কনভেনশনের আহ্বায়ক সৈকত মেটে ও ইন্দ্রনীল দত্ত জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ও বিকম পার্ট ২-র ফল প্রকাশ হলেও তা ত্রুটিপূর্নই রয়ে গিয়েছে। এর ওপর ওয়েবসাইটে শুক্রবার বিএ পার্ট-২-র যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাও ভুলে ভরা। তাঁদের দাবি, মোট ৩৩০০০ পর্রীক্ষার্থীর ফলাফলের মধ্যে প্রায় ৪০০০-ই অসম্পূর্ণ।

পার্ট টু পরীক্ষার ফলে গরমিল থাকার অভিযোগ জানাতে সোমবার বিকাশ ভবনেও গিয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। তাঁরা মার্কশিট সঙ্গে নিয়েই গিয়েছিলেন। সেগুলি দেখিয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য, ‘‘৫০-৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেলেও আমাদের উত্তীর্ণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। এটা কী হচ্ছে?’’

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার পরে বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও কলেজ বা পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও কেউ পার্ট টু-র ফলে ভুল থাকার কথা জানাননি। ওই ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি বিকাশ ভবনে কেন চলে গেলেন, বুঝতে পারছি না। যাই হোক, কোনও গরমিল থাকলে তা অবশ্যই শুধরে দেওয়া হবে।’’

burdwan university blockage student examination result B.com B.sc G T road police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy