Advertisement
০২ মে ২০২৪
Blood Crisis

উৎসবের মরসুমে টান রক্তে

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে রক্ত সংগ্রহের মূল উৎসই হল রক্তদান শিবির। তাতে পুরোপুরি চাহিদা মেটে না। যেমন, গত বছর মোট ১৯,২৮৯ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৮
Share: Save:

একে উৎসবের মরসুম। তাই গত বছরের তুলনায় এই বছরে রক্তদান শিবির কম আয়োজিত হয়েছে। কিন্তু অজানা জ্বর ও ডেঙ্গির কারণে বেড়েছে রক্তের চাহিদা। এই পরিস্থিতিতে আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

গত বছর পুজো ছিল ১ অক্টোবর থেকে। মাসের গোড়া থেকে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পুজোর মরসুম শেষ হয়ে যায়। ফলে, তুলনামূলক ভাবে ২০২২-এর অক্টোবরে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা ও রক্ত সংগ্রহ, দুই-ই চলতি বছরের তুলনায় বেশি ছিল। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ২০২২-এর অক্টোবরে ৩০টি শিবির থেকে ৮২৪ এবং চলতি বছরের অক্টোবরে ২৮টি শিবির থেকে ৭৮৯ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। অথচ, এই বছর অক্টোবরে রক্তের চাহিদা ছিল বেশি। গত অক্টোবরে ১,৩৮৪ এবং চলতি বছর অক্টোবরে ১,৫২০ জনকে রক্ত দিতে হয়েছে।

কেন বাড়ল চাহিদা, তার ব্যাখ্যায় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চলতি বছরে রক্তের চাহিদা বেড়েছে অজানা জ্বর ও ডেঙ্গির যৌথ আক্রমণে। রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।”

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে রক্ত সংগ্রহের মূল উৎসই হল রক্তদান শিবির। তাতে পুরোপুরি চাহিদা মেটে না। যেমন, গত বছর মোট ১৯,২৮৯ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল ১৬,৬০৪ ইউনিট। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত শিবির থেকে মোট ১৩,৯৩৭ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। রক্ত দেওয়া হয়েছে ১৬,৪৫১ ইউনিট। শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ এবং রক্তের চাহিদার মধ্যে এই ঘাটতি রোগীর আত্মীয়, পরিচিতেরা পূরণ করেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ ভাবে এপ্রিল, মে, জুনে, অর্থাৎ গ্রীষ্মে রক্তের ঘাটতি দেখা যেত। গত দু’বছরে সেটা অনেকটাই সামলানো গিয়েছে। কিন্তু এই ঘাটতি গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে উৎসবের মরসুমে। পুজোর সময়ে, রক্তদান শিবির প্রায় হয় না বললেই চলে। ব্লাড ব্যাঙ্কের দাবি, গত তিন বছর আসানসোলের গোপালপুরের একটি ক্লাব ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে পঞ্চমীর সন্ধ্যায় রক্তদান শিবির আয়োজিত হচ্ছে। তাতে পুজোর চার দিন পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সঞ্জিতের আবেদন, “জেলা হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে ২৫০-৩০০ ইউনিট রক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য মজুত রাখতেই হয়। গড়ে দৈনিক ৫৫ ইউনিট রক্ত লাগে। আমরা চাই আরও বেশি সংখ্যক মানুষ রক্তদান করতেএগিয়ে আসুন।”

তবে, ব্লাড ব্যাঙ্কের এই পরিস্থিতির জেরে সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। জেলা হাসপাতালে গোলু কর্মকার ও আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আভারানি বন্দ্যোপাধ্যায়েরা চিকিৎসাধীন। তাঁদের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম জনের এ+ ও দ্বিতীয় জনের এবি- গ্রুপের রক্ত আনা হয়েছে যথাক্রমে বড়জোড়া ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক থেকে।

জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “জনসাধারণ রক্তের অভাব মিটিয়ে দেন। তাঁদের কাছে আর্জি, উৎসবের সময়ে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়ালে রোগীদের পরিবারকে হয়রান হতে হবে না।” হাসপাতালে রক্তের অভাব মেটাতে বুধবার হাসপাতাল চত্বরে রক্তদান শিবির আয়োজিত হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সব স্তরের কর্মীদের কাছে রক্তদানের আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানান নিখিল। পাশাপাশি, রক্তদান আন্দোলনের নেতা প্রবীর ধরের প্রতিক্রিয়া, “রক্তের অভাবে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। আগামী কয়েক দিনে তিনটি রক্তদান শিবির হবে। সমাজের নানা স্তরে রক্তদান শিবির করার আবেদন জানিয়ে প্রচারচালানো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Crisis blood bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE