E-Paper

সুচ, সুতোয় ভর করে জঙ্গলমহল থেকে টেমস-পারে পাড়ি বুল্টির

বুল্টির এই শিল্পযাত্রা শুরু হয়েছিল তেরো বছর বয়সে। বুল্টি জানান, স্কুলজীবনে পড়ার ফাঁকেও চালিয়ে গিয়েছেন সেলাইয়ের কাজ।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ০৯:৪৯
বুল্টি বিবি।

বুল্টি বিবি। নিজস্ব চিত্র।

কিশোরী থাকতে বাবাকে একটা কাঁথাস্টিচের ব্যাগ কিনে দেওয়ার আবদার করেছিলেন তিনি। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সে দিন বাবা তা কিনে দিতে পারেননি। সেখান থেকেই শুরু। মা-মাসিদের কাছে হাতে খড়ি নিয়ে নিজেই শুরু করলেন কাঁথাস্টিচের কাজ। আর সেই কাঁথা শিল্পের দৌলতেই লন্ডনে যাচ্ছেন আউশগ্রামের ওয়ারিশপুরের বুল্টি বিবি। ৩১ মে থেকে বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের মতো কয়েকটি সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফাগুন ফেস্ট’-এ বিলেতের দরবারে তিনি তুলে ধরবেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঁথাশিল্পকে।

বুল্টির এই শিল্পযাত্রা শুরু হয়েছিল তেরো বছর বয়সে। বুল্টি জানান, স্কুলজীবনে পড়ার ফাঁকেও চালিয়ে গিয়েছেন সেলাইয়ের কাজ। প্রায় ২০ বছর হল কাঁথার কাজ করছেন। দিনে দিনে নিখুঁত হাতে রপ্ত করেছেন ২৭ ধরনের সেলাই, লোকায়ত ও আধুনিক নকশা। তিনি বলেন, “এক সময় কেবল মহাজনের হাতে কাজ তুলে দিয়েছি, প্রদর্শনীতে যাওয়া হয়নি কখনও। কিন্তু এখন ভারতের নানা প্রান্ত ঘুরে কাজের প্রদর্শনী করেছি। ২০২৩ সালে ডেনমার্কেও গিয়েছি। ২৭ মে রওনা দেব ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে।”

চার সন্তানের মা বুল্টি সংসার সামলেই প্রতি দিন ৭-৮ ঘণ্টা করে কাজ করেন। তাঁর স্বামী শেখ গিয়াসউদ্দিন জানান, বছর চারেক আগে বাংলা নাটক ডট কম নামে এক সংস্থার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাদের সহায়তায় ইংরেজি শেখা এবং প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার পথ খুলে যায় বুল্টির। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে কাঁথাশিল্পের পসরা নিয়ে গিয়েছেন তিনি। বুল্টি জানান, বছরে প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা আয় করেন। নিজের উপার্জনের টাকায় কিনেছেন স্কুটি। তাতে চেপেই গ্রামে ঘুরে ঘুরে শতাধিক মহিলাকে কাজ শেখাচ্ছেন ও উপার্জনের রাস্তা দেখাচ্ছেন তিনি।

তাঁর সাফল্যে গর্বিত গোটা আউশগ্রাম। বুল্টি বলেন, “এই পথ মসৃণ ছিল না। গ্রামের মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। আর্থিক সমস্যা তো আছেই। অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের। প্রথম প্রথম অনেকে বলেছিল বাইরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেবে। তবে আমার স্বামী আমাকে সাহস যুগিয়েছে।” গ্রামের বাসিন্দা সাজিয়া চৌধুরী, সরিফা খাতুন, তহমিনা বেগমরা জানাচ্ছেন, “বুল্টির হাত ধরে গ্রামের অনেক মেয়েই প্রথম বার ঘর পেরিয়ে বাইরের দুনিয়ার মুখ দেখেছে। নিজে উপার্জন করেছে।”

বাংলা নাটক ডট কমের কর্ণধার অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, “বেঙ্গল হেরিটেজের প্রতিনিধিরা বুল্টির কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এবং তাঁকেই ফাগুন ফেস্ট-এর জন্য নির্বাচিত করা হয়।” মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবাও। আবেগ জড়িত গলায় আফতাব আলম বলেন, “ছোটবেলায় প্লেনের আওয়াজ শুনে ছুটে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত মেয়েটা। ভাবিনি এক দিন সেই প্লেনে চেপেই সেবিলেত যাবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kantha Stitch Work Ausgram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy