ইঞ্জেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে এক সঙ্গে বেশ কয়েক জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার রাতে দু’জনকে সিসিইউতে স্থানান্তরও করতে হয়। ওই ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠিক কোন ইঞ্জেকশনের প্রভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল, তা জানতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন। আপাতত ওই সব ইঞ্জেকশন বন্ধ রেখে বিকল্প ইঞ্জেকশন দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছেন।
সোমবার রাতেই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব অনিরুদ্ধ নিয়োগী। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আমি নিজে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। নিয়ম মেনে চিকিৎসা করা হয়েছে। প্রত্যেক রোগীই ভাল আছেন।” মেডিক্যালের অধ্যক্ষ বলেন, “কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। শ্বাসকষ্টজনিত মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই সুস্থ হয়ে যান।” মঙ্গলবার সকালেই সিসিইউতে থাকা প্রসূতিদের সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ওই বিভাগের কয়েক জন নার্স জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অন্য দিনের মতো চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তাতে অ্যান্টিবায়োটিক-সহ সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া মায়েদের প্রয়োজনীয় সাধারণ ইঞ্জেকশন ছিল। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে প্রত্যেকের ‘স্ক্রিনিং’ও করা হয়। কিন্তু রাতে খাওয়ার সময়েই এক-দু’জন অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। তাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সেই দেখে শনি ও রবিবার অস্ত্রোপচার হওয়া প্রসূতিদের বেশ কয়েক জনও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ওই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা প্রসূতিদের পরিজন, গুসকরার নূপুর বাগদি, বর্ধমানের বামবটতলার দিপালী মুর্মু, মঙ্গলকোটের শেখ রহমতুল্লা, গলসির নূরজাহান বিবিদের দাবি, “খাওয়ার সময় আমাদের মেয়েদের হঠাৎ করে খিঁচুনি শুরু হয়। জ্বরও চলে এসেছিল। এ রকম কেন হল, তা দেখা উচিত।” বর্ধমানের কালনা গেটের বাসিন্দা ষষ্ঠী বৈরাগ্যের মতো কয়েক জনের দাবি, “ওই ঘটনার পরেই অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্তারা প্রসূতি ও স্ত্রী বিভাগে ছুটে আসেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই ছিল। সবাই সুস্থ বোধ করার পরে তাঁরা বেরিয়ে যান।”
হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “সব সময়েই স্ক্রিনিং করার পরে অ্যান্টিবায়োটিক বা ওই জাতীয় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কোনও ভাবেই এর অন্যথা হয় না। তার পরেও দু’এক জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু সোমবার এক সঙ্গে বেশ কয়েক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল কেন, সেটাই দেখতে হবে।” হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “ওই বিভাগের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরেবোঝা যাবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)