Advertisement
E-Paper

সস্তা পাওয়ারলুমের শাড়িতে কদর হারাচ্ছে হাতে বোনা তাঁত

সরকারি হাটগুলিতে জোর কদমে পুজোর বেচাকেনা শুরু হয়ে গেলেও তাঁতের শাড়ির চাহিদা তেমন নেই। ক্রেতারা সুরাট, বাংলাদেশ থেকে আসা শাড়িই বেশি কিনছেন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১১
পূর্বস্থলীতে তাঁত বোনায় ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

পূর্বস্থলীতে তাঁত বোনায় ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

যন্ত্র চালিত তাঁতের দৌরাত্ম্যে হস্তচালিত তাঁতে তৈরি শাড়ির চাহিদা কমেছে— হতাশা প্রকাশ করেছেন কালনা মহকুমার ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, শ্রীরামপুর এলাকার তাঁতিরা। তাঁদের দাবি, পুজোর আর ক’দিন বাকি। সরকারি হাটগুলিতে জোর কদমে পুজোর বেচাকেনা শুরু হয়ে গেলেও তাঁতের শাড়ির চাহিদা তেমন নেই। ক্রেতারা সুরাট, বাংলাদেশ থেকে আসা শাড়িই বেশি কিনছেন।

জেলার মধ্যে এই মহকুমাতেই তাঁত শিল্পীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। দু’দশক আগেও সংখ্যাটি ছিল ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এ ছাড়া সুতো রং করা, মাড় দেওয়া-সহ নানা কাজে যুক্ত থাকতেন আরও মানুষ। তাঁতে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী বিক্রির জন্য ছোট-বড় বহু দোকানও তৈরি হয়েছিল এলাকায়। পুজোর সময় চাহিদা মেটাতে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে তাঁত শিল্পীরা হাতে টানা তাঁতে তৈরি শাড়ির জোগান দিতেন।

ক্রমে বাংলাদেশ, সুরাট থেকে পাওয়ারলুমের শাড়ি পৌঁছতে শুরু করে। এই শাড়ির কম দাম এবং নতুন নকশা ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়। এই সব শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়েও তৈরি হয় বেশ কিছু পাওয়ারলুম। তবে সেগুলি বাইরের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই কমতে থেকেছে তাঁত শিল্পীদের সংখ্যা। আগ্রহ হারিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মও। হকারি, রাজমিস্ত্রীর কাজ ছাড়াও একটা বড় অংশ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। একে একে বন্ধ হয়েছে তাঁত ঘর।

বর্তমানে এই মহকুমায় হাজার দশেকও তাঁতি নেই। যাঁরা আছেন তাঁরাও অভাবেই দিন কাটাচ্ছেন বলে দাবি। সরকারি উদ্যোগে এই কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রাম এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকের শ্রীরামপুরে তৈরি হয় দু’টি তাঁত-হাট। ধাত্রীগ্রামে তাঁত-হাটে সপ্তাহে দু’দিন পাইকারি বেচাকেনা হয়। শ্রীরামপুরে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন না বলেই দাবি স্থানীয় তাঁতিদের। এ দিকে সমুদ্রগড়ে একটি বেসরকারি হাট আছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, সেখানে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু এলাকার তাঁতিদের তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ির বিক্রি এমন কিছু নয়।

তাঁত শিল্পী তপন বসাক বলেন, “এক সময় রথের দিন থেকে পুজোর শাড়ি বোনা শুরু হত। কলকাতা-সহ নানা জায়গা থেকে বরাত আসত। এ বার মাস খানেকও নেই পুজোর, শাড়ির চাহিদাই নেই।” শিল্পী হুমায়ুন শেখ বলেন, “তাঁতের শাড়ির দাম কমেছে। লোকসান হচ্ছে। পলিয়েস্টার সুতোর শাড়ি বুনছি। এই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়। প্রতি দিন তিন-চারটি শাড়ি বোনা যাচ্ছে। শাড়ি পিছু লাভ হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা।” বন্দনা হালদার নামে অপর এক তাঁত শিল্পীর কথায়, “স্বামী-স্ত্রী আগে তাঁত বুনতাম। লাভ কমায় স্বামী ভিন্‌ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। নিজে যে টুকু রোজগার করি, তাতে তেল, নুনের অর্থও জোগাড় হয় না।”

তাঁত শিল্পীদের একাংশের দাবি, প্রতি বছর পুজোর আগে শিবির করে শাড়ি কেনে তন্তুজ। তাও সব ধরনের শাড়ি কেনে না এই সংস্থা। নতুন নকশা দিয়ে কিছু বরাত মিলছে বটে তবে চাহিদার তুলনায় তা অত্যন্ত কম।

যদিও তাঁতের শাড়ির বাজার তলানিতে ঠেকেছে মানতে নারাজ মহকুমা হ্যান্ডলুম অফিসার রঞ্জিত মাইতি। তিনি বলেন, “তাঁত শিল্পের উন্নতিতে সুতো ব্যাঙ্ক চালু, মেগা ক্লাস্টার তৈরির মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মহকুমার বেশ কিছু তাঁতি মেখলা, ওড়না তৈরি করছেন। পুজোর মুখে তাঁত হাটগুলিতে ভিড় বাড়ছে। আশা, এ বার তাঁতের শাড়ি ভাল বিক্রি হবে।”

Handloom Saree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy