Advertisement
E-Paper

কমিশনের টোপ দিয়ে প্রতারণা

হায়দরাবাদ পুলিশ জানায়, মোহন রাজ নামে এক জন গত ১৪ নভেম্বর অভিযোগে জানান, তাঁর ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট থেকে ছ’লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। ওই ব্যক্তি জানান, তাঁকে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে কেউ এক জন ফোন করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৯
দুর্গাপুর আদালতে। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুর আদালতে। নিজস্ব চিত্র

টোপ একটাই, ‘পাশবই দিলে কমিশন পাইয়ে দেব’। সেই ‘টোপ’ গিলেও ফেলেছিলেন কয়েক জন। আর তাতেই বিপদ। ওই কয়েক জনের মধ্যে এক যুবককে গ্রেফতার করল হায়দরাবাদ পুলিশ! কারণ, সেই ‘কমিশন’ আসলে একটি সাইবার প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। যে এই টোপ ফেলেছিল, তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুর্গাপুরের স্কুলপাড়ার ঘটনা।

হায়দরাবাদ পুলিশ জানায়, মোহন রাজ নামে এক জন গত ১৪ নভেম্বর অভিযোগে জানান, তাঁর ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট থেকে ছ’লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। ওই ব্যক্তি জানান, তাঁকে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে কেউ এক জন ফোন করে। এটিএম কার্ড ‘ব্লক’ হয়ে যাবে, এমন ভয় দেখিয়ে তাঁর কার্ডের যাবতীয় তথ্য নেওয়া হয়। ফোনে কথা বলতে বলতেই মোবাইলে আসে ‘ওটিপি’। তা-ও মোহনবাবু ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন।

ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিভিন্ন জনের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা নানা ভাগ করে ‘ট্রান্সফার’ করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই জানা যায়, এই ‘চক্রে’র এক জন রয়েছে দুর্গাপুরের কোকআভেন থানা এলাকায়। তার পরেই দুর্গাপুরে হায়দরাবাদ পুলিশের পাঁচ জনের একটি দল আসে। মঙ্গলবার রাতে স্কুলপাড়়ার বাসিন্দা, দুর্গাপুর স্টেশন বাজার লাগোয়া এলাকার খৈনি বিক্রেতা দীপক শাহকে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, দীপক জেরায় তাদের কাছে জানিয়েছে, তিনি প্রথমে এলাকার কয়েক জনের ‘অজ্ঞতা’র সুযোগে, তাঁদের ‘জিরো ব্যালেন্স’ অ্যাকাউন্টের পাশবই জোগাড় করেন। বলেন, ‘পাশবই দিলে কমিশন পাইয়ে দেব।’ অন্তত দশ জনের পাশবই হাতে পেয়ে, সেগুলির যাবতীয় তথ্য দীপক দুষ্কৃতীদের সরবরাহ করে। যাঁরা পাশবই দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্কুলপাড়ারই বাসিন্দা, বেসরকারি কারখানার কর্মী নীরজ ভগত নামে এক জন।

মঙ্গলবার রাতে নীরজের বাড়িতে যায় পুলিশ। সেই সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বুধবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নিজেই ভাই ধীরজকে সঙ্গে নিয়ে কোকআভেন থানায় যান। তখনই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, জেরায় নীরজ তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা ছিল না। দিন কয়েক আগে দীপক তাঁকে জানান, তাঁর ব্যাঙ্কে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নেই। নীরজের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখবে সে। এর পরেই নীরজ তাঁকে পাশবই দিয়ে দেন। সম্প্রতি নীরজের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা ঢোকে। এর মধ্যে আট হাজার টাকা দীপক নেন। বাকি দু’হাজার টাকা নীরজ পান। তাঁর ভাই ধীরজ বলেন, ‘‘দীপককে বিশ্বাস করে দাদা ফেঁসে গিয়েছে। এলাকার অনেকের পাশবইয়ের তথ্যই দুষ্কৃতীদের কাছে রয়েছে। তাঁরাও চিন্তায় রয়েছেন, এমন পরিস্থিতি যদি তাঁদের ক্ষেত্রেও হয়, সেই ভেবে।’’ ধীরজ তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, দীপক রানিগঞ্জের কারও মাধ্যমে জসিডির এক জনের কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠান। সেখান থেকে তা পৌঁছে যায় দুষ্কৃতীদের কাছে। বুধবার দীপককে আদালতে তোলা হলে তার জামিন মঞ্জুর করে বিচারক ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে হায়দরাবাদে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। দীপকের শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বৃহস্পতিবার নীরজকে আদালতে তোলা হলে তাঁর ট্রানজিট রিমান্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তকারীরা জানান, নীরজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হায়দরাবাদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় এক জনের অ্যাকাউন্টেও কয়েক হাজার টাকা ঢুকেছে বলে জানা গিয়েছে। খোঁজ চলছে তাঁরও।

Cheating Commission Passbook
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy