Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনায় মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে হয়রানির নালিশ

রোগীর মৃত্যু হলে তার পরেও ভোগান্তি কমছে না। জুলাই-অগস্ট থেকে ঘুরেও এখনও ডেথ সার্টিফিকেট মিলছে না বলে অভিযোগ অনেকের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০০:১১
Share: Save:

সংক্রমিত হওয়া থেকে মৃত্যুর ঘটনা— নানা ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করছেন করোনা আক্রান্তদের পরিজনেরা। আক্রান্তদের ‘একঘরে’ করে রাখা হচ্ছে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কল সেন্টারে ফোন করে এমন অভিযোগও জানানো হয়েছে কিছু জায়গা থেকে। এর মধ্যে মৃতদের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ পেতে ভোগান্তির মুখে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।

করোনা আক্রান্ত অনেক রোগীর পরিজনের দাবি, বিস্তর ঘোরাঘুরি করার পরেও নিয়মের ফাঁসে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ মিলছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরে এমন বেশ কিছু অভিযোগ জানানোর পরে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় সপ্তাহখানেক আগে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখার আর্জি জানান। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) এনাউর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিটি পুরসভা, পঞ্চায়েত ও হাসপাতালকে সরকারের নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই করোনায় মৃতদের শংসাপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, পূর্ব বর্ধমানে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪৬ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ জনই মারা গিয়েছেন গাংপুরের বেসরকারি কোভিড-হাসপাতালে। এ ছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর মৃত্যুর পরে, তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে পরিজনদের জানিয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) তথা করোনা সংক্রান্ত নোডাল অফিসার সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘করোনায় মৃতদের পরিজনদের অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন, ডেথ সার্টিফিকেট পেতে তাঁদের হয়রান হতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সময়ে দাহ করার শংসাপত্র নেই বলে সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েত পরিজনদের ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চাইছে না।’’ কয়েকদিন আগে জেলাশাসককে এই বিষয়টি নিয়ে লেখা চিঠিতে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় জানান, কোভিড-বিধি অনুযায়ী, করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁর সৎকার সরকার করে থাকে। তাতে মৃতের পরিজনদের বিশেষ ভূমিকা থাকে না। অথচ, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা করোনায় মৃতের পরিজনদের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে দাহ করার শংসাপত্র জমা দিতে বলছেন। দাহ করার নথি দেখাতে না পারলে, ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে ভোগান্তি থেকে বাঁচানোর অনুরোধ করেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অনেকের দাবি, উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকেই হয়রানি শুরু হচ্ছে। করোনা-আক্রান্ত হওয়ার পরে কার্যত ‘একঘরে’ হতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পরে, অনেকেই ‘দূরে’ ঠেলছেন। রোগীর মৃত্যু হলে তার পরেও ভোগান্তি কমছে না। জুলাই-অগস্ট থেকে ঘুরেও এখনও ডেথ সার্টিফিকেট মিলছে না বলে অভিযোগ অনেকের।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের জন্য করোনায় মৃত কারও পরিবারকে অসুবিধায় পড়তে হয়নি। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ডেথ সার্টিফিকেট পেয়েছেন।’’ গাংপুরের বেসরকারি কোভিড- হাসপাতালটি যে এলাকায় রয়েছে, সেই বৈকন্ঠপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, দাহ করার শংসাপত্র জমা দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট নিতে হয়। বর্ধমান পুরসভা বা পঞ্চায়েত থেকেও দাহ করার সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হচ্ছে না। অনলাইনে জমা দিলে ডেথ সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর বক্তব্য, ‘‘দাহ করার শংসাপত্র ছাড়াই ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য জেলা থেকে নির্দেশ মিলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE