কোভিড-পরিস্থিতির মধ্যে দোকান-বাজার খোলা থাকছে মাত্র তিন ঘণ্টা। এই পরিস্থিতিতে কার্যত বসে গিয়েছে শিল্পাঞ্চলের পাইকারি বাজার, জানাচ্ছেন শিল্পোদ্যোগীরা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কম-বেশি ৮০০ মুটে-মজুরদের উপরে, দাবি বিভিন্ন বণিক সংগঠনের।
বিভিন্ন বণিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ, বরাকর, নিয়ামতপুর ও আসানসোল, জেলা তথা দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বড় এই চারটি পাইকারি বাজারে মূলত আটা, চাল, ময়দা, চিনি, ডাল ও ভোজ্য তেলের পাইকারি বেচা-কেনা হয়। এ ছাড়া, নানা ধরনের মশলা ও শৌখিন জিনিসপত্রেরও কেনা-বেচা চলে। ব্যবসায়ীরা জানান, এই পাইকারি বাজারগুলি থেকে জেলার পাশাপাশি, লাগোয়া বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, মিহিজাম-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়।
দক্ষিণবঙ্গের ন’টি জেলা নিয়ে তৈরি বণিক সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের পাইকর বাজারগুলিতে দৈনিক প্রায় ৭৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এখন সেটা হচ্ছে, মাত্র ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা।’’ ‘বরাকর চেম্বার অব কমার্স’-এর সম্পাদক শিবকুমার আগরওয়াল জানান, ‘‘তিন ঘণ্টা বাজার খোলা। এই সময়ের মধ্যে পাইকারি বাজারে বেচা-কেনা করা সম্ভব নয়। কারণ, খুচরো বিক্রেতারা কেউই এই সময়ের মধ্যে বাজারেই আসছেন না। ফলে, বেশির ভাগ পাইকারি ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে রেখেছেন। পাইকারি বাজারে লেনদেন অর্ধেকেরও কম হওয়ায় খুচরো বাজারে সামগ্রীর যোগানে টান পড়তে শুরু করেছে।’’
ব্যবসায়ীদের মতে, এই পরিস্থিতির ফলে, বাজারগুলির সঙ্গে যুক্ত মুটে-মজুরদের কর্ম-সঙ্কোচন হয়েছে। এই ধরনের শ্রমিকেরা মূলত ট্রাকে করে আসা সামগ্রী ওঠানো-নামানো এবং ছোট গাড়ি, ভ্যান রিকশা করে খুচরো বাজারে সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। বরাকর বাজারের মুটে-মজুরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাজারের পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশের আগেও পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল না। তাই প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে তাঁদের আয় অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। বিনোদ মাহালি নামে এক মুটে-মজুর বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে কিছু করার নেই। আগে ট্রাক থেকে প্রতি ৩০ কেজি মাল নামাতে আড়াই টাকা করে পেতাম। দিনে প্রায় ৫০০ টাকা রোজগার ছিল। এখন দেড়শো টাকা।’’ বেশ কয়েকজন মুটে-মজুরের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাঁদের রোজগার শূন্য হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ঘরে হাঁড়ি চড়বে না।
এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বাজার সংক্রান্ত এই নিয়ম জারি থাকলে, প্রশাসনের কাছে পাইকারি বাজার খোলা-বন্ধের সময়সীমা পরিবর্তনের আর্জি জানানো হবে এবং মুটে-মজুরদের কল্যাণার্থে কিছু করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবু। শিবকুমারবাবুও বলেন, ‘‘দুপুর ১টা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখার অনুমতি দিলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’’ তবে দু’টি সংগঠনই করোনা-পরিস্থিতির মধ্যে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতির মধ্যে প্রশাসনের হাত-পা কার্যত বাঁধা। তবে প্রান্তিক শ্রম-ক্ষেত্রের অসুবিধার বিষয়গুলি নিয়ে ইতিমধ্যে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।’’