যন্ত্রের সাহায্যে চলছে ধান কাটা, ভাতারে। নিজস্ব চিত্র
শ্রমিক সঙ্কটে কী ভাবে বোরো ধান ঘরে তুলবেন, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে চাষিদের। তার মধ্যেই শুক্রবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এই পরিস্থিতিতে পাকা ধান কী ভাবে বাঁচানো যায়, সেটাই মাথা ব্যথার কারণ সাধারণ চাষি থেকে কৃষি কর্তাদের।
‘লকডাউন’-এর জেরে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক আনার ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্য সরকার। স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা যাবে না। বাইরে থেকে শ্রমিক আনা ঝুঁকির বলেও জানানো হয়েছে। সম্প্রতি জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী একটি চিঠি দিয়ে বাইরে থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে অনুমতি চেয়েছিলেন। সে চিঠিরও উত্তর আসেনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলাশাসকের দফতরে একটি বৈঠকে ঠিক হয়, শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে সমস্যায় পড়তে পারেন, এমন বড় চাষিদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিডিও, ওসিরা। সেখানে আশ্রয় শিবিরে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে। এতে শ্রমিক-সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একই জেলার মধ্যে অন্য জায়গা থেকে কৃষি শ্রমিক আনতে গেলেও চাষিদের আর্জি জানাতে হবে।’’
সোমবার থেকে শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু এলাকায় ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, ধান ঝরে গিয়েছে, বেহাল নিকাশির জন্য জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। জেলা কৃষি দফতরের হিসেবে, মঙ্গলকোট, মেমারি ২ ও গলসি ১ ব্লকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সাড়ে চার হাজার হেক্টরের বেশি ফসলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েক হেক্টর জমির আনাজও নষ্টের মুখে। জগন্নাথবাবু বলেন, “বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাঁদের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। চাষিরা অনলাইনে বিমার জন্য আবেদনও করতে শুরু করে দিয়েছেন।’’
জেলা কৃষি দফতরের হিসেবে, বোরো মরসুমে চাষ করেছেন, এমন ৯৫% চাষি বিমার আওতায় চলে এসেছেন। এ ছাড়া, কৃষিঋণ নিয়ে চাষ করায় সাধারণ নিয়মেই বিমার আওতায় রয়েছেন ১,৬৪,৫১৯ জন চাষি। আরও এক লক্ষ ৮৫ হাজার চাষি সাধারণ চাষি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বিমা করিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “চাষিদের বাঁচানোটাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিমা পেতে চাষিদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, দফতরের আধিকারিকদের সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।“
এ ছাড়া, ধান কাটতে ‘হারভেস্টর’ যন্ত্র ব্যবহারে জোর দিচ্ছে কৃষি দফতর। ভাতার-সহ জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা শুরুও হয়ে গিয়েছে। প্রদীপবাবুর কথায়, “জেলাতেই আধুনিক মানের যন্ত্র রয়েছে। মাটি ভিজে থাকলেও ধান কাটতে কোনও অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া, ভিন্ রাজ্য থেকে যন্ত্র আনার ব্যাপারেও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।’’ কৃষি দফতর প্রচার চালাচ্ছে, এক হেক্টর জমির ফসল কাটতে যেখানে ১১০-১২৫ জন শ্রমিক লাগে। সেখানে এক-তৃতীয়াংশ খরচে যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র দু’ঘণ্টায় ফসল বাড়িতে পৌঁছে যাবে। তাতে সময় ও ফসল, দুই-ই বাঁচবে বলে কৃষি দফতরের কর্তারা মনে করছেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy