E-Paper

প্রতিবাদে পথে বাম, বিতর্ক নেতার কুকথায়

পুলিশ প্রথমে মিছিলে বাধা দেয়। বচসা থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শেষে সংক্ষিপ্ত মিছিলের অনুমতি দেয় পুলিশ। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেন দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৭
হামলার প্রতিবাদে মিছিল দুর্গাপুরে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডে। নিজস্ব চিত্র

হামলার প্রতিবাদে মিছিল দুর্গাপুরে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডে। নিজস্ব চিত্র

দলের বিভিন্ন গণ সংগঠনের ডাকা মিছিলে হামলা এবং দলীয় কার্যালয়ে বোমাবাজি ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে প্রতিবাদ মিছিল করল সিপিএম। পুলিশ প্রথমে মিছিলে বাধা দেয়। বচসা থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শেষে সংক্ষিপ্ত মিছিলের অনুমতি দেয় পুলিশ। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেন দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন আসানসোলেও প্রতিবাদ-সভা করে বামেদের নানা গণ সংগঠন।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন গান্ধী মোড় থেকে মিছিল যাওয়ার কথা ছিল সিধো-কানহু ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে পুরসভা পর্যন্ত। পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। মিছিল আটকাতে স্টেডিয়ামের দুই প্রান্তের রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। মিছিলের উদ্যোক্তারা পুলিশকে জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিল করা হবে, অনুমতি দেওয়া হোক। পুলিশ জানিয়ে দেয়, কোনও রাজনৈতিক দলকেই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁদেরও দেওয়া হবে না। শেষে পুলিশ জানায়, মিছিল গান্ধী মোড় থেকে সোজা ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোড ধরে গিয়ে পুরসভা যাওয়ার আগে পেট্রল পাম্প পর্যন্ত যেতে পারে।

সিপিএমের অভিযোগ, সেই ভাবে মিছিল শুরু হলেও, নেতাদের যেতে বাধা দিতে থাকে পুলিশ। সে নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। শেষে মিছিলে যোগ দিতে দেওয়া হয়। তবে পেট্রল পাম্পে পৌঁছে অনেকে জোর করে পুরসভার দিকে যেতে চান। ফের একপ্রস্ত পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তের নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ দিন মিছিলে যোগ দেন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী প্রমুখ। অনাদির অভিযোগ, ‘‘আমাদের কর্মীদের উপরে নৃশংস হামলা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে বোমাবাজি, ভাঙচুর হয়েছে। তার পরে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে বাধা দিচ্ছে দলদাস পুলিশ। এ ভাবে আটকানো যাবে না আমাদের। প্রতিরোধ হবে। আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার বিচার না মেলা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’ মীনাক্ষীর দাবি, ‘‘আর জি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তাই এই রকম হামলা করছে তৃণমূল। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যাই ঘটুক, আন্দোলন কোনও ভাবেই থামবে না।’’

এ দিন আসানসোলের রবীন্দ্রভবন চত্বরেও বিক্ষোভ-সভার আয়োজন করে সিপিএমের ১২টি গণ সংগঠন। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ ও দুর্গাপুরের সিপিএম কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। মীনাক্ষী সেখানেও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। বুঝতে পেরেছেন, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে।’’ আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘এ রাজ্যে কয়লা মামলার তদন্ত থেকে বগটুই— সবেই হতাশ করেছে সিবিআই। এই ঘটনায় তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করছে কি না, আমরা নজরে রেখেছি।’’

প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপালের অভিযোগ, ‘‘বুধবার মুখ্যমন্ত্রী দলের কর্মীদের ফোঁস করার নিদান দেওয়ার পরেই তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের কার্যালয়ে বোমবাজি করেছে, কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে। মহিলারাও বাদ যাননি।’’ এ দিন বুদবুদ বাজারে প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিএমের গলসি ১ এরিয়া কমিটি। মিছিল শেষে পথসভা করা হয়। ছিলেন দলের এরিয়া কমিটির সম্পাদক হারাধন ঘোষ-সহ নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘সিপিএমের কথা সাধারণ মানুষ গুরুত্ব দেন না বলেই গত বিধানসভায় ওরা কোনও আসন পায়নি। কথায় বলে, শূন্য কলসি আওয়াজ করে বেশি। সেটাই হয়েছে সিপিএমের অবস্থা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ দুর্গাপুরের সভায় তাঁর বক্তব্যে তৃণমূলের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের জন্যই সিপিএমের এই দুরবস্থা। প্রকাশ্যে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে তৃণমূল কর্মীদের খুনের নিদান দিচ্ছেন! এর জবাব মানুষ দেবে।” বুধবারের গোলমালের জন্য সিপিএমকেই দায়ী করেন তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM TMC Durgapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy