E-Paper

ভাগীরথীতে কুমির-দর্শন, আতঙ্কে ফাঁকা ফেরিঘাট

ভাগীরথীতে কুমির-দর্শন নতুন নয়। কখনও কালনা, কখনও নদিয়ার বিভিন্ন ঘাটের অদূরে দেখা মিলেছে কুমিরের। সম্প্রতি নবদ্বীপের কাছে ভাগীরথীতে একটি কুমির দেখা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ০৯:৩৯
কালনায় ভাগীরথীতে কুমির।

কালনায় ভাগীরথীতে কুমির। নিজস্ব চিত্র।

সকাল সাড়ে ৭টা। ঢেউ আর দমকা হাওয়ায় দুলছে যাত্রিবাহী লঞ্চ। কালনা খেয়াঘাট থেকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই চালক অশোক মাঝির নজরে আসে, জলে ভাসছে একটি কুমির। মুঠোফোনে সেই ছবি বন্দি করেছিলেন তিনি। বেলা বাড়তে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিয়ো। তার পরেই ভাগীরথীর দুই পাড়ের ঘাটগুলি কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়।

ভাগীরথীতে কুমির-দর্শন নতুন নয়। কখনও কালনা, কখনও নদিয়ার বিভিন্ন ঘাটের অদূরে দেখা মিলেছে কুমিরের। সম্প্রতি নবদ্বীপের কাছে ভাগীরথীতে একটি কুমির দেখা যায়। ২০২৩-র ১০ অক্টোবর গভীর রাতে কালনা শহরের জাপট পালপাড়ায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক কুমির। বুধবার ভাগীরথীতে কুমিরের দেখা মেলার পরে মাইকে যাত্রীদের উদ্দেশে সচেতনেতা প্রচার শুরু হয়েছে।

কালনা খেয়াঘাটের ইজারদারদের তরফে জয়গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কুমিরের কথা শোনার পরেই বিষয়টি মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিককে জানানো হয়। মানুষকে সজাগ করতে প্রচার শুরু করি।’’ খেয়াঘাটটি কালনা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি অনিল বসু মাইকে প্রচার করে জানান, ‘কুমির দেখা দিয়েছে। নদীতে স্নান করতে নামবেন না।’ আশপাশের ঘাটগুলিতে যাঁরা স্নান করছিলেন, তাঁদের দ্রুত উঠে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেলা ১০টা নাগাদ কুমিরটি যে অভিমুখে গিয়েছে, লঞ্চে চেপে সে দিকে যান কালনার উপ-পুরপ্রধান তপন পোড়েল, পুর-প্রতিনিধি সমরজিৎ হালদার, বন দফতরের দুই প্রতিনিধি এবং কালনা থানার আধিকারিক। কিছু দূর যেতে তাঁদের নজরে আসে, নদীর পাড়ে একটি পাটখেতের সামনে রয়েছে কুমিরটিকে। কাছে যেতেই সেটিকে জলে নেমে পড়ে। তপন জানান, স্রোতের টানে শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চলে গিয়েছে কুমিরটি।

শহরের বাসিন্দা গোপা দত্ত বলেন, ‘‘বছর দেড়েক আগে গভীর রাতে লোকালয়ে ঢুকেছিল কুমির। এ বারও যে এমন ঘটনা ঘটবে না, কে বলতে পারে? এখন কিছু দিন ভাগীরথীর ঘাটে সজাগ থাকতে হবে।’’ বন দফতর জানিয়েছে, কুমিরটি মগর প্রজাতির। এই ধরনের কুমির সাধারণত মিষ্টি জলে থাকে। মাছ-সহ জলজ প্রাণী শিকার করে। বনকর্তাদের অনুমান, ভাগীরথীতে জল বাড়ায় স্রোতের অনুকূলে ভেসে এসেছে সেটি। তবে সম্প্রতি নবদ্বীপে এই কুমিরটিই দেখা গিয়েছিল কিনা, তা অবশ্য নিশ্চিত করতে পারেনি বন দফতর।

বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জ আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘কুমিরটিকে নদিয়ার শান্তিপুরের দিকে ভাগীরথীর পাড়ে একটি পাটখেতে এ দিন শেষ বার দেখা গিয়েছে। সম্ভবত রোদ পোহাতে ডাঙায় উঠেছিল। কুমিরটি প্রায় সাত ফুট লম্বা। নজরদারি চলছে।’’ তিনি জানান, এই ধরনের মিষ্টি জলের কুমিরের মেজাজ তেমন আক্রমণাত্মক হয় না। তবে সাবধানে থাকতে হবে। ছোটরা যাতে জলে না নামে সে দিকে নজর দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন বছর ভাগীরথীতে মাঝেমধ্যেই কুমিরের দেখা মিলছে। এর একটা ভাল দিক হল, হয়তো নদীতে খাবার এবং পছন্দের পরিবেশ পাচ্ছে ওরা।’’

‌মহকুমা শাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘বন দফতরের প্রতিনিধিদের থেকে কুমিরটির বিবরণ শুনেছি। ঘাটগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারাও নজর রাখছেন। কোনও ঘাটের কাছাকাছি কুমিরটি দেখা গেলে সেই এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalna Crocodile

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy