E-Paper

বাহিনীর ‘দখলে’ স্কুল, চিন্তা পঠনপাঠন নিয়ে

৮ অগস্টের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে কিংবা পাঠ্যসূচি কী ভাবে শেষ হবে, চিন্তিত প্রধান শিক্ষকরা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৫
বর্ধমান টাউন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

বর্ধমান টাউন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। — নিজস্ব চিত্র।

জামালপুরের আঝাপুর হাইস্কুলে ১৫টি ঘর নিয়ে আছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পঠনপাঠন, মিড-ডে মিল কার্যত বন্ধ। পাঠ্যক্রম শেষ হবে কি না, চিন্তায় শিক্ষকেরা।

রায়নার শেরপুর গ্রামের হরেকৃষ্ণ কোনার শিক্ষা নিকেতনেও বাহিনী রয়েছে। স্কুল বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আবর্জনায় ভরছে স্কুল চত্বর, লাগায়ো পুকুর।

শুধু এই দু’টি নয়, জেলার বহু স্কুলেই আড়াই মাস ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। আরও দশ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বেশির ভাগ থানা এলাকাতেই কোনও না কোনও স্কুলে ঠাঁই হয়েছে জওয়ানদের। ওই সব স্কুলগুলির দাবি, গ্রীষ্মের ছুটিতে দেড় মাস, তার পরে বাহিনী থাকার জন্য এক মাস ধরে পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। কী ভাবে ৮ অগস্টের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে কিংবা পাঠ্যসূচি কী ভাবে শেষ হবে, চিন্তিত প্রধান শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা সূচি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরে চিঠি দেওয়া হবে।

জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক বিষয়। আমাদের কিছু বলার নেই। উপর থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সে ভাবেই চলার জন্য বলা হবে।’’

গ্রাম বাংলায় বেশির ভাগ পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। যাঁদের আছে, সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল থাকায় অনলাইন ক্লাস মুশকিলের। স্কুলগুলিতেও সেই পরিকাঠামো নেই। শিক্ষকদের প্রশ্ন, এ ভাবে আড়াই মাসের পাঠ্যসূচি শেষ করা অসম্ভব। এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘শনি ও রবিবার বিশেষ ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু পড়ুয়ারা টানা স্কুলে থাকতে চাইছে না। বুঝতে পারছি, পাঠ্যসূচি শেষ করার তাগিদে বেশি করে পড়াতে গিয়ে পড়ুয়ারা অধৈর্য হয়ে পড়ছে। যে টুকু শেখার তাগিদ রয়েছে, তা-ও হারাচ্ছে।’’

জামালপুরের আঝাপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যে স্কুলের বেশ কিছু চেয়ার, বেঞ্চ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মিড-ডে মিল চালু করার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলের তিনটে ঘর, ল্যাবরেটরি, গ্রন্থাগারে পড়ুয়াদের বসিয়ে পড়ানো শুরু করেছেন তাঁরা। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই মাস ধরে স্কুল বন্ধ। সবার অনলাইনে পড়ার মতো পরিকাঠামো নেই। বাধ্য হয়েই স্কুল চালু করলাম।’’ বর্ধমান শহরের টাউন স্কুলের সব ঘরও বাহিনীর দখলে। স্কুল কর্তৃপক্ষেরও দাবি, দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। বছরের পাঠ্যসূচি শেষ করার জন্য ছুটির দিনে ও অনলাইনে বাড়তি ক্লাস করানোর ভাবনা রয়েছে। প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘পঠনপাঠনের কথা কেউ ভাবছে না!’’

রায়না ২ ব্লকের পাইটা ১ পঞ্চায়েতের শেরপুর গ্রামের হরেকৃষ্ণ কোনার শিক্ষা নিকেতনের অভিভাবকদের দাবি, বাহিনী থাকায় স্কুলের ভিতরে আবর্জনা জমছে। স্কুল লাগোয়া পুকুর পাড় দূষিত হচ্ছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য সন্দীপ দাঁ বলেন, ‘‘স্কুলের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’ টিচার-ইন চার্জ সামসুল আলমের দাবি, অনলাইনে পড়ার পরিকাঠামো নেই সবার। পাঠ্যসূচি শেষ করা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। মেমারির দেবীপুর স্টেশন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা টুম্পা সেনও বলেন, ‘‘পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে চিঠি দেওয়া হবে।’’ অভিভাবকেরাও জওয়ানদের অন্যত্র রাখার দাবি তুলেছেন।

ভাতারের শুশুনদিঘি এইচপি হাইস্কুলে বাহিনী থাকায় গত কয়েক দিনে ছ’হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হিম্মত আলির দাবি, ‘‘ওই বিল মেটানো স্কুলের পক্ষে অসম্ভব।’’

জেলা প্রশাসনের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশে কিসান মান্ডি, নির্মীয়মাণ বাড়িতেও বাহিনীকে রাখা হয়েছে। যে সব ব্লকে বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি, সেখানেই স্কুলে রাখতে হয়েছে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jamalpur CRPF Jawan Post Poll Violence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy