E-Paper

প্রতিমার সাজ তৈরিতেও দুর্যোগের ছায়া

নিজের বাড়িতে বহু বছর ধরে প্রতিমার গলার মালা এবং চাঁদমালা তৈরি করছেন কালনা শহরের শিল্পী মঞ্জু পাল। তাঁর কাছে শহর, গ্রামের বহু মহিলা কাজ শিখেছেন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১২
চাঁদমালা তৈরি হচ্ছে পুজোর আগে।কালনায়।

চাঁদমালা তৈরি হচ্ছে পুজোর আগে।কালনায়। নিজস্ব চিত্র ।

দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় যায় কালনার শিল্পীদের তৈরি দুর্গা প্রতিমার গলার মালা, চাঁদমালা এবং সাজসজ্জা। শিল্পীদের দাবি, লাগাতার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হয়নি। পুজো যত এগিয়ে আসছে তত এই সমস্ত জিনিসপত্রের বরাত বাড়ছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তিনেক পরেই মহালয়া। কী ভাবে চাহিদা মোতাবেক সাজের জোগান দেওয়া যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় শিল্পীরা।

নিজের বাড়িতে বহু বছর ধরে প্রতিমার গলার মালা এবং চাঁদমালা তৈরি করছেন কালনা শহরের শিল্পী মঞ্জু পাল। তাঁর কাছে শহর, গ্রামের বহু মহিলা কাজ শিখেছেন। কেউ তাঁর কারখানায় বসে চাঁদমালা তৈরি করেন। বেশ কিছু গ্রামে তিনি পাঠান প্রতিমার মালা এবং চাঁদমালা তৈরির রঙিন কাগজ, পিচবোর্ড, আঠা-সহ নানা কাঁচামাল। মহিলারা কাজের ফাঁকে তৈরি করেন মালা এবং চাঁদমালা তৈরি করে রোজগার করেন। পুজোর মাস দুই আগে থেকে চাঁদমালা এবং প্রতিমার গলার মালা পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি, কলকাতা-সহ নানা প্রান্তে পৌঁছয়। ষাটোর্ধ্ব মঞ্জু বলেন, ‘‘এ বার প্রতিমার মালা এবং চাঁদমালা করতে খুব কষ্ট হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কাঁচামাল শিল্পীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে যেমন সমস্যা হয়েছে, তেমনই হাতে তৈরি চাঁদমালা শুকোতেও বেগ পেতে হয়েছে। চাহিদার তুলনায় এ বার হাতে তৈরি চাঁদমালা অনেক কম হয়েছে।’’ মঞ্জুর ছেলে সুব্রতও শিল্পী। তাঁর কথায়, ‘‘এ বারের মতো টানা দুর্যোগ আগে দেখিনি। এখনও চলছে দুর্যোগ। চাঁদমালা এবং প্রতিমার গলার মালা তৈরিতে পরিশ্রম বেশি হয়েছে। দুর্যোগের কারণে হাতে তৈরি চাঁদমালা হয়েছে অনেক কম।’’ তিনি জানান, এ বার এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের লাখ দুই চাঁদমালা এবং লাখ তিনেকেরও বেশি মালা তৈরি হয়েছে। এর একাংশ বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য।

সুব্রত বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর জন্য মালা এবং চাঁদমালা যে পরিমাণ তৈরি হয়েছে, চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি। বিশ্বকর্মা পুজোর তিন দিন পরেই মহালয়া। অন্য বার বিশ্বকর্মা পুজোর পরে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় পাওয়া যায়। এ বার তা মিলবে না। তাই দুর্গাপুজোর মালা, চাঁদমালার জোগান দেওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ হাতে তৈরি চাঁদমালার ডজন প্রতি দর ৪২০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। কোরিয়ান কাগজ, পিবিসি কাগজ এবং পাটের তৈরি মালার চাহিদা এ বার বেশি। চার হাত লম্বা মালা বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩৫০ টাকা দরে।

কালনার শিল্পীদের তৈরি সাজের কদর রয়েছে বিদেশেও। এ বার শহরের শিল্পী অমর পালের তৈরি একটি সাজ কুমোরটুলি থেকে মাস খানেক আগে পৌঁছেছে আমেরিকায়। তিনি এ বার পাঁচ লক্ষের বেশি ঝিনুক, শঙ্খ-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি করছেন একটি সাজ, যেটি শোভা পাবে কালনা শহরের পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পুজোর প্রতিমায়। সাজটি তৈরিতে সাহায্য করেছেন শিল্পীর ছেলে অভীক পাল। তিনি বলেন, ‘‘সাজেও যে উন্নত শিল্পকর্মের প্রদর্শন করা যায় তা আমরা পুজো মণ্ডপে তুলে ধরব। সাজটি তৈরিতে অনেক সময় লেগেছে। যে প্রতিমার শরীরে সাজটি উঠবে সেটিও আমাদের তৈরি।’’ অমর জানান, এ বার শুরুতে সাজের খুব বেশি চাহিদা ছিল না। মাস খানেক হল তা বেড়েছে। এখনও বরাত আসছে। তবে সময় না থাকায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। শিল্পীর দাবি, এ বার দুর্গাপুজোয় তাঁর কারখানায় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দামের তিনশোর বেশি জরির সাজ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025 Kalna

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy