ভোটের আগে ভোটার তালিকা খুঁটিয়ে দেখতে যে ভাবে বাড়ি বাড়ি যান কর্মীরা, সেই ধাঁচেই এ বার ‘ভুয়ো’ ভোটার চিহ্নিত করতে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার বর্ধমানে দলের বৈঠক থেকে বুথ স্তরের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই কাজ করার নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২০ মার্চের মধ্যে বুথ স্তরের রিপোর্ট এক সঙ্গে জেলায় পাঠানোর নির্দেশ দেন ব্লক সভাপতি ও বিধায়কদের। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা দ্রুত এবং ঠিক ভাবে শেষ করাই লক্ষ্য।”
শনিবার টাউন হলে তৃণমূলের জেলা ও ব্লক স্তরের নেতাদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “লোকসভা ভোটের সময়ে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলাম। তার পরে এক বছর গেল। আর খোঁজ রাখা হয়নি। এ বার যেতে হবে।” পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের তাঁর বার্তা, “এখন দলের দিকে নজর দেওয়া দরকার। অফিস ডিউটি কমিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করুন।” বৈঠকে ছিলেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ শর্মিলা সরকার, জেলা সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারেরা।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যে দাঁইহাটে ভিন্ রাজ্যের এবং পূর্বস্থলীতে ভিন্ দেশের বাসিন্দার নাম মিলেছে ভোটার তালিকায়। বর্ধমান, রায়না ২ ব্লকেও ‘ভুতুড়ে’ ভোটারের সন্ধান মিলেছে। এ দিন বৈঠকের পরেই মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য ভোটার তালিকা নিয়ে সরডাঙা গ্রামে যান। বিধায়কের দাবি, সেখানে তিনি এমন দু’জনের নাম পেয়েছেন, যাঁদের ওই গ্রামের সঙ্গে কোনও যোগ নেই, গত লোকসভা ভোটেও নাম ছিল না।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধি ও শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিদের তালিকার প্রতিটি অংশ যাচাই করতে হবে। নতুন ভোটারেরা যা নথি জমা দিয়েছেন, তা পরীক্ষা করা, দরকারে তাঁদের স্থানীয় ঠিকানা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। কোনও অসঙ্গতি বা সংশয় থাকলে জেলার রিটার্নিং অফিসারের দফতরে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিধানসভা ধরে ‘গরমিল’ রিপোর্ট আকারে জেলা দফতরে জমা দিতে হবে।
এ দিন বৈঠকে দলের নেতাদের একাংশ এমনও দাবি করেন, বুথ স্তরে স্থানীয় নেতাদের মূল্যায়ন হবে। প্রয়োজনে এই পর্বেই দায়িত্ব বদল হতে পারে। জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম বলেন, “বাড়ি যাওয়া নিয়ে এখনও অনেকে তেমন সক্রিয় নন। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ মানতেই হবে।” জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীও বলেন, “বুথ কমিটিগুলিকে সক্রিয় হয়ে দলের নির্দেশ মানতে হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)