খাল-বিল চৌচির। জল নেই পুকুরে। এই পরিস্থিতিতে কালনা মহকুমার বাসিন্দারাই যে শুধু ভোগান্তির মুখে, এমনটা নয়। গবাদি পশুদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে বলেও শঙ্কা বাসিন্দাদের একাংশের। তেমনটা যাতে না হয়, তার জন্য আগেভাগেই সতর্ক থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক প্রাণিসম্পদ সুমারি অনুসারে কালনা মহকুমায় ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৩৬টি গরু, ৬৩২৭টি মোষ, ২৫৭৩টি ভেড়া, ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৭টি ছাগল, ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ১৬৮টি মুরগি ও ৬৬ হাজার ২৭২টি গৃহপালিত হাঁস রয়েছে। এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে পশুপালনের উপর। বছরভর সংসার চালাতেও অনেকে প্রাণিপালনের উপর নির্ভর করেন।
বাসিন্দারা জানান, বছরভর সকাল বেলা গোয়াল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় গবাদি পশুদের। সাধারণত মাঠের সবুজ ঘাস আর খাল-বিলের জলই তাদের ভরসা। ফলে প্রাণিপালনের জন্য বাড়তি তেমন খরচ হয় না বলে জানান বাসিন্দারা। কিন্তু গত বছর অগস্টের পর থেকেই তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে সবুজ ঘাসের যেমন অভাব, তেমনই পকুর, খাল-বিলও ফেটে চৌচির। ফলে পর্যাপ্ত গবাদি পশুদের পরিমাণ খাবার ও জল মিলছে না বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ। শুধু তাই নয়, চড়া রোদের জেরে দিনের বেশির ভাগ সময়টাই গোয়াল ঘরে কাটাতে হচ্ছে গবাদি পশুদের। সেখানেও গরমের হাত থেকে যে রেহাই মিলছে, এমনটা নয়।
প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ইতিমধ্যেই গবাদি পশুদের শরীরে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে এফিমেরাল নামে এক ধরণের রোগ অন্যতম। এ ছাড়া গরু, মোষ, ভেড়াগুলিকে দিনভর ঝিমিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ। গবাদি পশুগুলির চলাফেরাও তেমন স্বাভাবিক ঠেকছে না বলে জানান তাঁরা। মন্তেশ্বরের বাসিন্দা গোপাল কর্মকার বলেন, ‘‘মাঠ থেকে ফিরে কেমন যেন ঝিমিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে গরু, মোষদের। হাল খারাপ হাঁস, মুরগিরও।’’
এই পরিস্থিতিতে ডিম, দুধ প্রভৃতি প্রাণিজ সম্পদের উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। যেমন, গোপালবাবু জানান, আগে যে গরু থেকে চার কেজি দুধ মিলত। এখন মিলছে মেরেকেটে কিলো দেড়েক। নাদনঘাটের বাসিন্দা হাসেম শেখ হাঁস, মুরগি পালন করেন। তাঁর দাবি, ‘‘গরম পড়তেই ডিমের উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের সহ অধিকর্তা (হেড কোয়ার্টার) সমীর শীলও। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা জুড়ে তাপমাত্রার পারদ ঘোরাফেরা করছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। শরীরে জল কম যাওয়ায় কাহিল পড়ছে গবাদি পশুরা। এর ফলে ডিম ও দুধের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।’’
পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে বেশ কিছু দাওয়াই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, চড়া রোদের মধ্যে গবাদি পশুদের ছাড়া যাবে না। যতটা সম্ভব ছায়ার তলায় রাখতে হবে। গোয়ালে সর্বদা গরু, মোষের মুখের সামনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল রাখতে হবে। জলের সঙ্গে গুড়, নুন মিশিয়ে দিতে হবে। ভোর বেলা বা সন্ধ্যায় স্নান করাতে হবে গবাদি পশুদের। পর্যাপ্ত জল না মিললে শুধুমাত্র পশুদের মাথার দিকটা ধুইয়ে দিতে হবে। শরীরে জলের ঘাটতি মেটাতে পশুদের বেশি করে খাওয়াতে হবে। সমীরবাবু বলেন, ‘‘শরীরে জলের অভাব মেটাতে প্রতিদিন এক থেকে দু’হাত লম্বা কলা গাছ ছোট ছোট করে কেটে যে কোনও খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে গবাদি পশুদের। ফলে শরীরে জলের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামও পৌঁছবে।’’ পোলট্রি ফার্মের চারপাশে ভেজা চট ঝুলিয়ে রাখা দরকার বলে জানান সমীরবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy