বর্ধমান শহরে চিকিৎসক-পত্নীকে খুনের দায়ে তাঁদের গাড়িচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ বর্ধমান আদালত। এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি চিকিৎসককে মারাত্মকভাবে জখম করার দায়ে গাড়িচালককে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। দু’টি মামলাতেই জরিমানার টাকা অনাদায়ে এক বছর করে কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সব ক’টি সাজাই একসঙ্গে চলবে। তবে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সাজাপ্রাপ্ত যত দিন জেলে রয়েছেন, তা সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।
সাজাপ্রাপ্তের নাম তপন দাস ওরফে তপা। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ এলাকায় তাঁর বাড়ি। গত শুক্রবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সাজা ঘোষণার আগে মঙ্গলবার দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র তাঁর বক্তব্য শোনেন। তার আগে বিচারক তাঁকে সাজার মেয়াদের বিষয়ে অবহিত করেন। প্রথমে আসামি বিচারককে জানান, গরিব হওয়ার কারণে মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। পরে বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও বৃদ্ধ মা রয়েছে। বিচারকের কাছে সাজার বিষয়ে নরম মনোভাব নেওয়ার জন্য আর্জি জানান তপন। মামলার সরকারি আইনজীবী শিবরাম ঘোষাল বলেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করে বিচারক যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন। এ ছাড়াও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।’’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক সুব্রত নাগের বাড়িতে গাড়িচালকের কাজ করতেন তপন। ২০১৯ সালে ২৮ অক্টোবর, কালীপুজোয় জুয়া খেলতে গিয়ে অনেক টাকা হেরে যান গাড়িচালক। ঘটনার দিন বেলা ৩টে নাগাদ তিনি শহরের খোসবাগানের তুলা লেনে চিকিৎসকের বাড়িতে যান। চিকিৎসকের কাছে আগাম বেতন দাবি করেন। চিকিৎসক দম্পতি মাস শেষ হওয়ার আগে বেতন দিতে অস্বীকার করায় তাঁদের বাঁশ দিয়ে মারধর করেন তপন। চিকিৎসক স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে মাথায় বাঁশের বাড়ি খান ৫৮ বছরের মৌসুমী নাগ। রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসক দম্পতিকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। সেখানে মৌসুমীকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অন্য দিকে, তাঁর স্বামীর মাথায় কয়েক’টি সেলাই পড়ে। খানিক সুস্থ হয়ে চিকিৎসক গাড়িচালকের বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চেষ্টা এবং স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ করেন থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে তপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
ঘটনাক্রমে বর্ধমান থানার সাব-ইনস্পেক্টর অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় মামলার চার্জশিট পেশ করেন। মামলায় ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। তিন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সাজার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।