Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বড়দিনে আঁধারে ঐতিহ্যের ক্লাব

উদ্দেশ্য ছিল বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের সময়টা উৎসব করে কাটানো। সে জন্য ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠেছিল ক্লাব। নানা জায়গা থেকে আসানসোলের এই ক্লাবে উৎসবের সময়ে ছুটি কাটাতে আসতেন সাহেবরা।

বন্ধ ডুরান্ড ইনস্টিটিউটের গেট। ছবি: শৈলেন সরকার।

বন্ধ ডুরান্ড ইনস্টিটিউটের গেট। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

উদ্দেশ্য ছিল বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের সময়টা উৎসব করে কাটানো। সে জন্য ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠেছিল ক্লাব। নানা জায়গা থেকে আসানসোলের এই ক্লাবে উৎসবের সময়ে ছুটি কাটাতে আসতেন সাহেবরা। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডায় গমগম করত ক্লাব চত্বর। বছরের অন্য সময়ে ক্লাবে ঢোকার অনুমতি না থাকলেও সেই সময়ে যেতে পারতেন এ দেশের মানুষজন। আসানসোলে সেই ‘ডুরান্ড ইনস্টিটিউট’ এখন পড়ে রয়েছে অন্ধকারে। উৎসবের মরসুমেও আর আলো জ্বলে না সেখানে।

বর্তমানে রেলের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ক্লাবটি। রেলকর্মীরা নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন সেটি। রেলের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ১৮৬৩ সালে আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়। তাতে যুক্ত ইউরোপিয়ান ইঞ্জিনিয়ারদের বিনোদনের জন্য ১৮৭৮ সালে আসানসোলেই গড়ে তোলা হয় এই বিনোদন কেন্দ্র। নাম দেওয়া হয় ‘ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনায়ার্স’।

পরে শুধু রেলের ইঞ্জিনিয়াররা নন, বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ইউরোপিয়ানরাও এখানে বড়দিন ও নববর্ষের উৎসবে যোগ দিতে আসতে শুরু করেন। এক সময়ে তাঁরা ক্লাবের নাম বদলের দাবি তোলেন। ১৯১৬ সালে নাম পাল্টে রাখা ‘ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ক্লাব পুরোপুরি রেলের অধীনে চলে যায়। বছর কয়েক পরে এক প্রাক্তন রেল আধিকারিকের নামে ক্লাবের নাম রাখা হয় ‘ডুরান্ড ইনস্টিটিউট’। শিল্পাঞ্চলে এই নামেই পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

এলাকার পুরনো বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই উৎসবে ভাটা পড়তে শুরু করে। শহরে রয়ে যাওয়া জনা কয়েক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কিছু রেলকর্মীর উদ্যোগে কয়েক বছর উৎসবের আসর বসেছিল। কিন্তু তাঁরাও পরে শহর ছে়ড়ে বিহারের ম্যাকলাস্কিগঞ্জে চলে যান। ফলে, বছর তিরিশ আগে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় ক্লাবের উৎসব। এখন আর বড়দিন বা ইংরেজি নববর্ষের রাতে সেখানে কেউ আসেন না। আলোও জ্বলে না।

১৯৫০ সালে এই ইনস্টিটিউটের প্রথম সম্পাদক হন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রেলকর্মী বি আর বার্জার। জানা গিয়েছে, প্রায় ৩৪ বছর তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৪ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে সম্পাদক নির্বাচিত হন কালীশঙ্কর ভট্টাচার্য। দায়িত্বে এসে তিনি ক্লাবের নাম বদলে উদ্যোগী হন। ১৯৮৭ সালে নামকরণ হয় ‘বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট’। কালীশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘সারা রাত ধরে উৎসব চলত। ইনস্টিটিউটের সামনের মাঠে মেলাও বসত। সব জৌলুসই মলিন হয়ে গিয়েছে।’’ প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো এই কেন্দ্রটি নতুন প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা হোক, আর্জি কালীশঙ্করবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durand Institute Christmas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE