Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Death

ছেলে হারিয়ে বাবার দাবি, গাড়ুই সংস্কার

(১) এ ভাবেই অবৈধ নির্মাণ গজিয়ে ওঠার অভিযোগ। (২) মৃতের পরিবারের সঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটক। (৩) মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ইফতেকার আলম।

(১) এ ভাবেই অবৈধ নির্মাণ গজিয়ে ওঠার অভিযোগ। (২) মৃতের পরিবারের সঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটক। (৩) মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ইফতেকার আলম। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

গাড়ুই নদীর পাড়েই বাড়ি। ফি বছর বর্ষায় এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয় ইবরার আলমের পরিবারের কাছে। কিন্তু এ বার ওই বাড়িরই ছেলে ইফতেকার আলম (২৪) তলিয়ে গিয়েছেন। খবর পেয়ে গত রবিবার এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। মন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস শুনে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইফতেকারের পরিবার। পাশাপাশি, জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য নয়। তাঁদের দাবি, দ্রুত নদী বুকে গজিয়ে ওঠা ‘অবৈধ নির্মাণ’ বন্ধ হোক। সংস্কার হোক গাড়ুই নদীর। মন্ত্রী পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

গত শুক্রবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে নদীর জলে প্রতি বছরের মতো প্লাবিত হয় আসানসোলের রেলপাড় এলাকা। শনিবার সকালে রাস্তা পারাপারের সময় নদীতে তলিয়ে যান আসানসোলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া ইফতেকার। রবিবার দেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন বিকেলেই মৃতের বাড়িতে গিয়ে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন মলয়বাবু।

মন্ত্রীকে পাশে পেয়ে ধন্যবাদ জানান ইফতেকারের বাবা ইবরার ও দাদা ইজাহার আলম। কিন্তু তাঁরা মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কর্তারা আমাদের পাশে রয়েছেন। ক্ষতিপূরণ বা সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমরা চাই, দ্রুত গাড়ুই নদীকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা হোক। সংস্কার করা হোক নদীর। ভবিষ্যতে আর কোনও বাড়িতে যেন এমন বিপর্যয় না নেমে আসে।’’ মলয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দ্রুত একটি কমিটি তৈরি করা হবে। কমিটি নদীর পাড়ে অবৈধ দখলদারির অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করে প্রশাসনকে দেবে। তার পরে, অবশ্যই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

কিন্তু পরিবারের কেন এমন আবেদন? ওই পরিবার সূত্রেই জানা যায়, গত বছর এক মহিলা, তার আগের বছর এক সাইকেল চালকের একই ভাবে তলিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। প্রতি বার বর্ষার সময় ‘অবৈধ নির্মাণ’ ও গাড়ুইয়ের জলে শতাধিক বাড়িতে জল ঢোকা— এই বিষয়গুলি সামনে আসে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, গত প্রায় তিন দশক ধরে বরাকর নদ থেকে বেরনো গাড়ুইয়ের নদীবক্ষ দখল করে, মাটি ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ চলছে। রেলপাড়ের মুৎসুদ্দিমহল্লা, জাহাঙ্গিরমহল্লা, কসাইমহল্লা, রামকৃষ্ণডাঙাল প্রভৃতি এলাকায় এই অবৈধ নির্মাণ দেখা যায় বলে অভিযোগ। মূলত পাড়ে থাকা মাটিই যন্ত্রের সাহায্যে অথবা শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে কেটে নদীবক্ষ দখল করা হয়। এর ফলে, পাড় সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। পাশাপাশি, নির্মাণের ফলে গতিপথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর জল চারপাশে ৫০ হাজার মানুষের বাস যে লোকালয়ে, সেখানে ছড়িয়ে পড়ে। আচমকা রাস্তাঘাট জলের তলায় চলে যায়। এলাকা জল থইথই হওয়ার সময়েই ঘটে প্রাণহানির মতো ঘটনা।

এলাকার বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর আশা শর্মার অভিযোগ, ‘‘বাম ও তৃণমূল, দুই আমলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির নির্মাণ ব্যবসায়ী এই কাজগুলি করে থাকেন। নির্মাণের জন্য পুরসভা থেকে ছাড়পত্রও নেওয়া হয় না ওই ঘনিষ্ঠতার কারণেই।’’ তবে ওই নির্মাণ ব্যবসায়ীরা প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। দলের সঙ্গে কোনও দিন এ সবের যোগ ছিল না, দাবি সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে এ সবের যোগ নেই। স্বয়ং মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করার। নিশ্চয় এ বার সমস্যার সমাধান হবে।’’ আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রেলপাড়ে যে অবৈধ নির্মাণ আছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পুরসভা এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE