বুদবুদের সাধুনগর গ্রামে রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বছরভর শুকিয়ে থাকা নদী ভয়াল রূপ নিয়ে বইছিল গত কয়েক দিন ধরেই। এ বার সেই খড়ি নদী দু’কূল ছাপিয়ে যাওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়ল বুদবুদের বেশ কিছু এলাকা। ধসে গিয়েছে কয়েকটি মাটির বাড়িও। আউশগ্রাম ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকাতেও কুনুর নদীর জল ঢুকেছে। কয়েকটি গ্রামের মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে বৃষ্টিতে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, জলমগ্ন এলাকাগুলিতে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
মানকর পঞ্চায়েতের মাড়ো গ্রামের পাশ থেকে উৎপত্তি খড়ি নদীর। বেশির ভাগ সময়েই তা শুকনো থাকে। কিন্তু এখন তার জল উপচে আসায় বুদবুদের মাড়ো, সাধুনগর এলাকায় জল ঢুকেছে। সাধুনগরে ধসে গিয়েছে বেশ কিছু মাটির বাড়ি। ওই এলাকার পাশেই রয়েছে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। তবে জল সেই রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এই এলাকার প্রায় পাঁচটি বাড়ি ধসে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। তাঁরা আরও জানান, খড়ি নদী ছাড়াও জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া নিকাশি নালার জলও ঢুকছে এই এলাকায়। ফলে প্রায় ৮০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
শুধু সাধুনগর নয়, খড়ি নদীর জল ঢুকেছে মাড়ো গ্রামেও। সেখানেও কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। নতুনগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ধসে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য রায়, সঞ্জয় রুইদাসরা জানান, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। অতিবৃষ্টিতে সমস্ত জমিই জলের তলায় চলে গিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘এ ভাবে বৃষ্টি হলে এ বছর আর ধান হবে না। সব ধানের চারা পচে যাবে।’’ এ দিন ওই সব এলাকা পরিদর্শনে যান মানকর পঞ্চায়েতের প্রধান কল্যাণী পাত্ররায়। তিনি জানান, বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের ত্রিপল-সহ ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। রাস্তা থেকে জল বের করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অজয়ের জল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে আগেই। সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অজয়ের পাশে কাঁকসা ও আউশগ্রামের বিভিন্ন গ্রামগুলিকে সতর্ক করার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতকাহনিয়া, শিবপুর-সহ নদীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। আউশগ্রাম ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতেও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিডিও দিপ্তীময় দাস। তিনি আরও জানান, অমরপুর পঞ্চায়েতের মৌখিড়া, মঙ্গলপুর, রামনগর পঞ্চায়েতের কুড়ুল, পল্লিশ্রী, গোপালপুর কলোনি, বেকুড়ি এবং ভেদিয়া পঞ্চায়েতের সাতলা, মালোচা-সহ নদীর পাশের বিভিন্ন গ্রামের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ওই সব পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বিডিও দিপ্তীময়বাবু বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ওই সব এলাকার কোথাও জল ঢোকেনি। ত্রাণ শিবির খোলারও ব্যবস্থা হয়েছে। তবে এখনও সেই রকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’
রবিবার সন্ধ্যায় অজয়ের জল ঢুকেছে চিত্তরঞ্জনের কুশভেদিয়া গ্রামেও। তাতে কয়েকটি মাটির বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সেতু জলের তলায় চলে যাওয়ায় শনিবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অন্ডালের শ্রীরামপুরে। সে দিনই খান্দরায় একটি বাড়ির এক দিকের দেওয়াল ভেঙে পাঁচ জন জখম হন। অন্ডালের বিডিও মানস পান্ডা জানান, পঞ্চায়েতগুলিকে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান জানাতে বলা হয়েছে।
টুমনি নদীর জল বাড়ায় লাউদোহা (ফরিদপুর) থানার কৈলাসপুর, আমদহি, জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রবিবার সকাল থেকে টুমনির জল বাড়তে শুরু করে। ওই সব জায়গার চাষের জমিগুলি সবই জলের তলায় চলে গিয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে লাউদোহাতেও বেশ কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy