Advertisement
E-Paper

ব্যবধান বাড়িয়ে জয়ী বাবুল

তৃণমূল নেতারা এ দিন কিছু বলতে রাজি না হলেও দলের কর্মীদের অনেকের দাবি, মেরুকরণ বড় কারণ হয়েছে এই এলাকায়।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:৪৫
বাবুল সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র

বাবুল সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র

দু’লক্ষ ভোটে জিতবেন, দাবি করেছিলেন প্রচার-পর্বে। প্রায় সেই ব্যবধানেই হারিয়ে দিলেন বিপক্ষের তারকা প্রার্থীকে। বাবুল সুপ্রিয়ের উপরে আরও এক বার আস্থা রাখল আসানসোল। প্রার্থী বদল করে মুনমুন সেনকে ময়দানে নামালেও খনি-শিল্পাঞ্চলে জয় অধরাই রয়ে গেল তৃণমূলের।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে বাবুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা উন্নয়নের কথা বলেছি। ওরা বুথ লুটের কথা বলেছে। মানুষ বেছে নিয়েছেন। আবার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’’ বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পরে মুনমুন বলেন, ‘‘কেন হেরেছি আমি জানি না। দলের নেতৃত্ব নিশ্চয় এ নিয়ে আলোচনা করবেন।’’

২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে প্রায় সত্তর হাজার ভোটে হারের পরে দলের উচ্চ নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন আসানসোলের তৃণমূল নেতারা। এ বার দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য তাই মাঠে নেমেছিলেন তাঁরা। তবে শেষরক্ষা হল না। কেন এই হার, সে প্রশ্নে দলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা দ্রুত আলোচনায় বসব।’’

তৃণমূল নেতারা এ দিন কিছু বলতে রাজি না হলেও দলের কর্মীদের অনেকের দাবি, মেরুকরণ বড় কারণ হয়েছে এই এলাকায়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে আসানসোল শহরে টানা কয়েক দিন ধরে চলা গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, এ বার ভোটের আগে পয়লা বৈশাখের বিকেলে বরাকরে অশান্তির ঘটনা এলাকার ভোটারদের উপরে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। শাসক দলের একাংশের আবার দাবি, কিছু নেতার ‘জোরজুলুম’ও ভাল ভাবে নেননি খনি-শিল্পাঞ্চলের মানুষ। বিভিন্ন সময়ে দলের লোকজনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগও উঠেছে।

তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের অনেকের দাবি, গত বার হারের পরেও আসানসোলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ক্ষত পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী দোলা সেনের হারের পিছনে নেতাদের কোন্দল বড় কারণ ছিল বলে মনে করেছিলেন উচ্চ নেতৃত্ব। এ বার গোড়া থেকে মুনমুনের সমর্থনে সব নেতা প্রচারে নেমেছিলেন। তা সত্ত্বেও নানা সময়ে বিভিন্ন পক্ষের বিবাদ প্রকাশ্যে চলে আসে। কুলটিতে দলের সভায় অধিকাংশ কাউন্সিলরের অনুপস্থিতি, নিঘায় কর্মিসভায় বেশ কিছু স্থানীয় নেতার না আসার ঘটনায় তা সামনে এসে পড়ে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মতে, গত বার বাঁকুড়ায় জিতে সাংসদ হওয়ার পরে এলাকায় মুনমুনকে বিশেষ দেখা না যাওয়ার অভিযোগ ছিল। তাই প্রার্থী হিসেবে তাঁকে নিয়েও অনেকের প্রশ্ন ছিল।

বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা বড় ব্যবধানে জয়ে সহায় হয়েছে। সেই সঙ্গে সাংসদ হওয়ার পর থেকে বাবুলকে নানা কাজে তৃণমূলের বাধা দেওয়ার ঘটনাও মানুষ ভাল ভাবে নেননি বলে তাঁদের দাবি। সাংসদ কাজ করতে চেয়ে কী ভাবে বাধা পাচ্ছেন, তা নানা সময়ে এলাকায় প্রচার করা হয়েছে। আসানসোলের কুমারপুরে লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুলের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেখানে আটকে থাকা ছিল আসানসোল ও আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে বড় সমস্যা। সেখানে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যে দিন সেই কাজের শিলান্যাস হয়, সে দিনও তৃণমূলের পতাকা হাতে কয়েক জন কালো পতাকা দেখান বাবুলকে। সাধারণ মানুষ এই ধরনের ঘটনা ভাল ভাবে নেননি, দাবি বিজেপি নেতা-কর্মীদের। আসানসোল স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেসের স্টপেজ দেওয়া চালুর পিছনেও বাবুলের ভূমিকা ছিল বলে মনে করেছেন শহরের অনেকে।

গত বার এই কেন্দ্রে সিপিএম পেয়েছিল আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোট। এ বার দলের প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় এক লক্ষ ভোটেও পৌঁছতে পারেননি। তৃণমূলের দাবি, বাম-ভোট গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার কারণেই ব্যবধান বেড়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশও মনে করছেন, দলের নিচুতলার একটা বড় অংশের ভোট গিয়েছে বিজেপির বাক্সে। দলের নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষের যে ভোট আমাদের দিকে ছিল, সেটা আমরা ধরে রাখতে পারিনি।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Babul Supriyo BJP TMC Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy