Advertisement
০৪ মে ২০২৪

লোক জড়ো করে হামলা, অভিযুক্ত তৃণমূলের নেত্রী

থানায় বসিয়ে তৃণমূলের বিবদমান নেতা নুরুল হাসান ও নেত্রী কাকলি তা-কে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিল পুলিশ। তিন সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ওই দুই নেতা-নেত্রীর দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিজয়রাম-দেওয়ানদিঘী এলাকা।

পড়ে ইটের টুকরো। ইনসেটে, ভাঙা চেয়ার-ফ্যান।—নিজস্ব চিত্র।

পড়ে ইটের টুকরো। ইনসেটে, ভাঙা চেয়ার-ফ্যান।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

থানায় বসিয়ে তৃণমূলের বিবদমান নেতা নুরুল হাসান ও নেত্রী কাকলি তা-কে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিল পুলিশ। তিন সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ওই দুই নেতা-নেত্রীর দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিজয়রাম-দেওয়ানদিঘী এলাকা।

রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রোডের দেওয়ানদিঘির কাছে ভোতার পারে জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসানের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান ১ ব্লকের সভানেত্রী তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কাকলি তায়ের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। কাকলীদেবীর যদিও দাবি, ঘটনাটি একেবারেই গ্রাম্য বিবাদ। রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষ অভিযোগও করেননি পুলিশের কাছে। বর্ধমান জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশের টহলও রয়েছে। অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বিজয়রাম এলাকার চকচকি পুকুর পাড়ের ১০ কাঠা জমি স্থানীয় মসজিদ কমিটিকে দান করেছিল একটি পরিবার। অভিযোগ, ওই এলাকার নুরুল অনুগামী দোলন শেখ ও মন্টু শেখেরা ওই পরিবারের কাছ থেকে জমির বদলে তিন লাখ টাকা নেয়। কিন্তু মসজিদ কমিটিকে টাকা ফেরত দেওয়ার নামগন্ধও করছিলেন না তারা। অন্য দিকে, ওই পরিবারটিও নতুন করে মসজিদ কমিটিকে জমি দান করার ব্যাপারে নিমরাজি হয়ে পড়েন। স্থানীয় রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য শেখ মুজিবরের অভিযোগ, “ইদের অনুষ্ঠান চলছিল, সেই সময় কয়েকজন মদ্যপকে সঙ্গে করে ওই দু’জন বলতে থাকেন, ‘আমরা টাকা ফেরৎ দেব না। আমার পিছনে নুরুল আছে। তোরা আমার কিছুই করতে পারবি না।” এর পরের দিনই সকাল থেকে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে বিজয়রাম ও দেওয়ানদিঘি এলাকায় লোকজন জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টা নাগাদ প্রায় পাঁচশো লোক ভোতার পারে জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসনের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তবে নুরুলের বাড়ির সামনে বড় পাঁচিল থাকায় সবাই বাড়ির ভিতর ঢুকতে পারেননি। নুরুলের পরিবারের অভিযোগ, ২০ থেকে ২৫ জন পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে প্রথমে নুরুলের খোঁজ করে, পরে নুরুল হাসানকে না পেয়ে টিভি-চেয়ার টেবিল-সহ বাড়ির জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দেয়। নুরুলের মা মথুজা বেগম বলেন, “ওরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে নুরুলকে খুঁজছিল। আমি কোনও রকমে নুরুলকে বুঝিয়ে দোতলার একটি ঢুকিয়ে দিয়ে তালা মেরে দিয়েছিলাম।” নুরুল হাাসানের ভ্রাতৃবধূ, রায়ান ১ পঞ্চায়েতের সদস্য সোনালি বিবিরও অভিযোগ, “দাদাকে মারবে বলে ওরা চিৎকার করছিল। বাড়িতে ঢুকে আমাদের ধাক্কাধাক্কিও করে।” নুরুলের বাবা, তৃণমূলের শিক্ষক সেলের নেতা রুহুল আমিনের অভিযোগ, “তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাকলি তায়ের উস্কানিতেই আমার বাড়িতে এক দল দুষ্কৃতী হামলা চালায়। এ ভাবেই ২০০৩ সালে তৃণমূল করার অপরাধে সিপিএম হামলা চালিয়েছিল।’’ তাঁর ক্ষোভ, “কাকলি তায়ের বাবা কাশীনাথ তা ছিলেন আমাদের এলাকার কংগ্রেসের বিধায়ক। তিনি খুন হওয়ার পর আমি প্রতি বছর তাঁর স্মরণসভা করেছি। কাকলিদেবীকে ব্লক সভাপতি করার জন্য আমার ছেলে দলের উচ্চ মহলে সুপারিশ করেছে। আজ তার হাতেই আমরা আক্রান্ত হলাম।’’ নুরুল হাসানেরও দাবি, “কাকলিদেবীর অনুগামী একদা সিপিএমের দুষ্কৃতী, এখন দলের এক নেতার জমি-জায়গা নিয়ে দালালি সহ নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমার দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ। সে কারণেই বাড়িতে হামলা চালানো হল। পুরো ঘটনা স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে জানিয়েছি। দলের নির্দেশ মতো থানায় অভিযোগ জানাব।” ঘটনাটি চাপা দেওয়ার জন্য তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষ চাপানো হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাকলি তা অবশ্য বলেন, “ওই দু’জন রাতভর পাড়ায় ঝামেলা করেছে। এই গ্রাম্য বিবাদ যাতে না বাড়ে তার জন্য আমি সারারাত জেগে নিয়ন্ত্রণ করেছি। সকালেও নানা ভাবে লোকজনকে বুঝিয়েছি। কিন্তু গ্রামের মানুষের এত ক্ষোভ ছিল যে, সবাইকে আটকানো যায়নি। ভাঙচুর বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা আসলে নাটক।”

আর জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় কিনা জানিনা। নুরুলের ফোন পাওয়ার পর পুলিশকে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করে বিষয়টি দেখতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE