মঙ্গলবার বর্ধমানে তৃণমূলের মিছিল। বিসি রোডে। ছবি: উদিত সিংহ।
পর পর রাজনৈতিক মিছিল। তার জেরেই দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্যবসা শিকেয়, অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান শহরে। যানজটে নাকাল পথচারীরাও। শহরবাসীর দাবি, কাজের সময়ে রাস্তা অচল করে মিছিল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। উৎসব ময়দান বা হল ভাড়া করে হোক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
শনিবার বর্ধমান শহরের রাজপথে রোড শো করেন বিজেপির সর্বভারতীর সভাপতি জে পি নাড্ডা। ওই দিন দুপুর থেকেই শহরের ‘প্রাণ’ জিটি রোড অচল হয়ে যায়। স্তব্ধ হয়ে যায় বিসি রোড-সহ অন্য রাস্তাগুলিও। রবিবার বিকেলে পাল্টা মিছিল করে যুব তৃণমূল। মিছিলে ছিলেন অভিনেতা তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি সোহম চক্রবর্তী। টাউন হল থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত মিছিলে রুদ্ধ হয়ে যায় শহর। সোমবার বাদ দিয়ে মঙ্গলবার ফের শাসকদলের মিছিল। এ দিন কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে মিছিল হয় টাউন হল থেকে রাজবাটী পর্যন্ত। এ ছাড়া, কার্জনগেট চত্বরে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি লেগে থাকে। সব মিলিয়ে নিশ্চিন্তে পথে চলার উপায় নেই শহরবাসীর।
কার্জনগেট এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী দিলীপ পাল, তাপস চৌধুরীদের দাবি, লকডাউনের জের এখনও কাটেনি। ব্যবসার হাল খুব ভাল নয়। তার উপরে যে দিন মিছিল থাকে, সে দিন দুপুর থেকেই ক্রেতা কম আসে। ভিড়, ঝামেলা এড়াতে কেউই দোকানমুখো হন না। তাঁরাও কার্যত দোকানে বন্দি হয়ে থাকেন। জিটি রোডে ব্যাগের দোকান রয়েছে বাবাই মুখোপাধ্যায়ের। তিনি ছাড়াও একটি বুটিকের মালিক রিনা দাঁ, তারক সামন্তেরা জানান, শনি-রবিবার দোকানে একটাও ক্রেতা আসেননি। মঙ্গলবার সকালের পরেও, ক্রেতার দেখা নেই। জিটি রোডের ফুল ব্যবসায়ী রামহরি মাঝি, হকার তাপস দত্তরাও বলেন, ‘‘বড় মিছিল থাকলে কম জিনিস নিয়ে বসি আমরা। অনেক সময়ে দোকান গুটিয়েও নিতে হয়।’’ তাঁদের দাবি, রাস্তা অচল করে মিছিল না করে উৎসব ময়দান বা কোনও হলে সভা হোক।
শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, মিছিলে অসুবিধার দাবি করেছেন পরিবহণ কর্মীরাও। টাউন সার্ভিস বাসগুলির কর্মী বা টোটো চালকদের দাবি, মিছিলের দিন যাত্রী হয় না বললেই চলে। অনেকক্ষণ যানজটে আটকেও থাকতে হয়। সামনে ভোট। রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়বে আরও। এই পরিস্থিতিতে রুজি নিয়ে চিন্তায় তাঁরা।
প্রতিদিন টাউন হলে সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে আসা সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায় বা শরীরচর্চায় আসা অচিন্ত্যকুমার ঘোষদেরও দাবি, ‘‘তারস্বরে মাইক আর ভিড়ের কারণে, মিছিল থাকলে সে দিন বাড়ির বাইরে পা রাখি না।’’
যদিও সাধারণ মানুষের জন্যই তাঁদের আন্দোলন, মানুষ তাঁদের পাশেই রয়েছে দাবি শাসক-বিরোধীর। জেলা পরিষদের সভাপতি তথা তৃণমূল নেত্রী শম্পা ধাড়ার দাবি, ‘‘কেন্দ্র মানুষের অসুবিধা করে নানা বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে জন্য আমাদের বারবার পথে নামতে হচ্ছে। কেন আমাদের পথে নামতে হচ্ছে, মানুষ নিশ্চয় বুঝছেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর পাল্টা, ‘‘নড্ডাজির মিছিলে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, আমাদের আন্দোলনে মানুষের সমর্থন রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy