Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘খাবার নষ্ট করবেন না’, অনুরোধ হোটেল মালিকের 

দয়া করে খাবার নষ্ট করবেন না।’ এই দৃশ্যটা আসানসোল আদালত চত্বরের একটি হোটেলের।

সেই হোটেলে। —নিজস্ব চিত্র।

সেই হোটেলে। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৮
Share: Save:

সার দিয়ে বসে চলছে খাওয়াদাওয়া। আর তাঁদের প্রত্যেকের সামনে দাঁড়িয়ে হোটেল মালিক জোড় হাতে অনুরোধ করছেন, ‘যতো ইচ্ছে খান। কিন্তু দয়া করে খাবার নষ্ট করবেন না।’ এই দৃশ্যটা আসানসোল আদালত চত্বরের একটি হোটেলের।

ভাত-রুটির ওই হোটেলের মালিক, আপার চেলিডাঙার বাসিন্দা কাজল দাস। তিনি জানান, যাচাই খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এই হোটেলে। তাই ক্রেতারা চাহিদা মতো ভাত, ডাল, তরকারি খেতে পারেন। কিন্তু তিনি জানান, বেশির ভাগ দিনই দেখা যেত, ক্রেতার শেষ পাতে ডাঁই খাবার। তা ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকত না। তা দেখে ‘খারাপও লাগত’, পরিবেশন করতে করতে বলছিলেন কাজলবাবু।

এমন সময়ে কাজলবাবু লক্ষ করেন, খাবারের অপচয় রুখতে ধারাবাহিক প্রচার চালাচ্ছেন শহরেরই একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু এবং একদল ছাত্র। তাঁদের কথা সংবাদমাধ্যমের সূত্রেই জেনেছিলেন কাজলবাবু। তিনি জানান, এক দিন তাঁর হোটেলে এসে চন্দ্রশেখরবাবুরা খাবারের অপচয় বন্ধের জন্য ক্রেতাদের কাছে আর্জিও জানিয়েছিলেন।সেই শুরু। কাজলবাবু বলেন, ‘‘খাবার নষ্ট হচ্ছে দেখে কষ্ট দিত। চন্দ্রশেখরবাবুদের প্রচারের ফলে আমিও এই আন্দোলনে যোগ দিই। তাই ক্রেতাদের এমন অনুরোধ করছি।’’ সেই মতো, খাবার নষ্ট বন্ধের বার্তা দিয়ে হোটেলের দেওয়ালে পোস্টারও সাঁটিয়েছেন তিনি।

কিন্তু কেন এমন ‘অনুরোধ’? ওই হোটেল মালিক বলেন, ‘‘ক্রেতাদের বলছি, শহরের অনেক শিশুই প্রতি দিন পেট ভরে খেতে পায় না। তাই বাড়তি খাবার তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’’ সেই মতো দিনের শেষে ওই হোটেলের বাড়তি খাবার পৌঁছেও যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকার শিশুদের জন্য, জানান কাজলবাবু।

চন্দ্রশেখরবাবুও এই পদক্ষেপে খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘শহরের বহু হোটেল মালিককে আমরা খাবারের অপচয় বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছি। প্রথমে প্রায় সকলেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু কাজলবাবু বছর দুয়েক ধরে শিশুদের জন্য খাবারের অপচয় রোখার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন।’’ কাজলবাবুর এই উদ্যোগে খুশি আশপাশের দোকান মালিকেরাও। তেমনই এক জন বুলু সাহা বলেন, ‘‘বাকিরাও এমনটা ভাবলে, সমাজ উপকৃত হবে।’’ কাজলবাবু জানান, এই ভাবনার সঙ্গে রয়েছেন হোটেলের অন্য কর্মীরাও।

এই হোটেলেই প্রায়ই খাওয়াদাওয়া করতে আসেন আসানসোল আদালতের আইনজীবী উদয়প্রতাপ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমবার এমন অনুরোধ শুনেই খাবারের অপচয় বন্ধে আমিও এগিয়ে এসেছি। যতটা দরকার, ততটাই খাবার নিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hotel Asansole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE