Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Potato

চড়া দামে বীজ, তবু এলাকা বৃদ্ধি আলু চাষে

পূর্ব বর্ধমান জেলায় গড়ে ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে নাবিধসা রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছিল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৬
Share: Save:

গত মরসুমে তুলনামূলক ভাবে ফলন বেশি হয়েছিল। তার পরেও বাজারে চাহিদা থাকায় মরসুমের শেষ পর্যন্ত দাম ছিল চড়া। চলতি মরসুমেও লাভের আশায় শীতকালীন অন্য ফসল ও আনাজের এলাকা কমিয়ে আলু চাষে ঝোঁক বেড়েছে জেলার চাষিদের একাংশের। এ বার আলু বীজের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও এলাকা কমা তো দূর, আলু চাষের এলাকা অনেকটাই বেড়েছে বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ঝুঁকি নিতে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকছেই চাষিদের।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় গড়ে ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে নাবিধসা রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছিল। ২০২০ সালে আলু চাষের এলাকা কমে যায়। প্রায় ৭০,২৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয় সে বার। আলুর গড় ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি হেক্টরে ২৮.২৫ টন। জমি থেকেই আলুর দাম ছিল প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৬৫০-৯০০ টাকা পর্যন্ত। সারা বছরই বাজার চড়া থাকায় হিমঘর থেকে প্রতি বস্তা আলু ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বার মরসুমের গোড়া থেকে আলু বীজের দাম চড়া ছিল। পোখরাজ বা জ্যোতি জাতের পঞ্জাবের সার্টিফায়েড বীজের দাম উঠেছিল বস্তা প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় পোখরাজ বা জলদি আলুর চাষ হয় ৭-৮ শতাংশ। সেই আলু উঠতেও শুরু করেছে।

কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা ছিল, বীজের দামের সঙ্গে সার, জল, শ্রমিকের মজুরিও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। তার জেরে চাষের এলাকা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিলেন কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশ। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তাঁরা। আলু পোঁতার মরসুম শেষে কৃষি দফতর জানাচ্ছে, আলু চাষের এলাকা গত মরসুমের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩,৬৭৬ হেক্টরে। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার ক্ষেত্রে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। এর আগে এক ধাক্কায় এতটা এলাকায় চাষ বাড়েনি।’’

পূর্ব বর্ধমান জেলায় মূলত আলু চাষ হয় কালনা, মেমারি, বর্ধমান ২ ও জামালপুরে। জামালপুরের চাষি শেখ ইলিয়াস, কালনার সন্তু হাজরাদের কথায়, ‘‘আমাদের মতো চাষিদের নিয়ন্ত্রণ আলু ব্যবসায়ীরা করে থাকেন। আলু চাষের খরচও জোগান। গত বছর লাভ দেখে এ বার কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছি।’’ মেমারি, বর্ধমান ২ ব্লক এলাকায় চিপ্‌স তৈরির আলুও অনেকে উৎপাদন করেন। সে জন্য কয়েক বছর ধরে চুক্তি চাষও বেড়েছে এলাকায়। গত বছর চাষিদের আলুর বিপণন ভাল হওয়ায় এ বার অনেকেই চুক্তি চাষ থেকে বিরত থেকেছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। মেমারির চাষি মানস ঘোষ, অরূপ পালদের কথায়, ‘‘চুক্তি চাষে হয়তো ক্ষতি নেই। কিন্তু লাভের পরিমাণও বেশি নয়। তাই চুক্তি চাষের পরিমাণ কমিয়েছি।’’ বর্ধমান ২ ব্লকের চাষি কাশেম আলি, সম্পদ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘এ বার আলুর দাম পেয়েছি। তাই সরষে বা আনাজের এলাকা কমিয়ে আলু চাষ বাড়িয়েছি।’’

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘‘চাষিরা লোভে পড়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। এই ফাটকা খেলার প্রবণতা ভয়ঙ্কর। কোনও কারণে বাজারে অতিরিক্ত জোগান হয়ে গেলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে উৎপাদন কমে গেলে, চাষিরা সমস্যায় পড়তে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Potato Potato Farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE