বুধবার সগড়ভাঙায়। নিজস্ব চিত্র
ফের আইএনটিটিইউসি-র গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থলও একই, দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার গ্রাফাইটের ইলেকট্রোড ও কার্বনের নানা সামগ্রী উৎপাদনকারী একটি বেসরকারি কারখানা। সেখানে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ দেখায় আইএনটিটিইউসি। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা এ দিন প্রায় আড়াইশো জন শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে দেননি।
ঘটনাচক্রে, এই কারখানাতেই গত ১২ জুন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের নেতৃত্বে তাঁর অনুগামীরা কারখানায় ঢুকতে গেলে অপর গোষ্ঠীর ‘বাধা’ দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে এলাকার পরিস্থিতিও তেতে উঠেছিল।
এ দিন ফের পুরসভার ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বেকার যুবকদের কাজের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয় কারখানার সামনে। অভিযোগ, প্রায় ২৫০ জনকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। যদিও, বিক্ষোভকারীদের দাবি, ওই শ্রমিকদের কাছে গেট পাস ছিল না। ওই আড়াইশো জনের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ-কেউ সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে স্বীকারও করেন, তাঁদের কাছে গেট পাস নেই। এর পরেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ অভিযোগ করেন, অর্থের বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক এনে তাঁদের রাতের অন্ধকারে নিয়োগ করা হয়েছে। তাই তাঁদের গেট পাস দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতির সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তবে ওই আড়াইশো শ্রমিকেরা আর কাজে যোগ দিতে পারেননি এ দিন।
এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরা জানান, এর ফলে কারখানার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে কাজে যোগ দিতে এসেও ফিরে যাওয়া শ্রমিক সুরজিৎ হালদার বলেন, ‘‘দেড় বছর ধরে কাজ করছি এখানে। আমার বাড়ি নডিহা। অথচ, আমাকেও বহিরাগত বলা হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সনৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বছর সাতেক হল কাজ করছি। আজ কী এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না। কাজ না থাকলে চরম বিপদে পড়ে যাব।’’
এর পরেই আইএনটিটিইউসি-র অন্দরে ‘বিবদমান’ বলে পরিচিত দু’পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে সরব হয়। বিশ্বনাথবাবুর অনুগামী হিসেবে সংগঠনের অন্দরে পরিচিতি কারখানার আইএনটিটিইউসি নেতা কিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় এবং কারখানার আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ রমজান শ্রমিকদের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। অর্থের বিনিয়মে বেআইনি ভাবে অনেককে কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ, স্থানীয়দের বঞ্চিত করা হয়েছে।’’ তবে প্রভাতবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ হয়নি। তিন বছর ধরে ওই কারখানার সংগঠন আমি দেখি না।’’ শেখ রমজানের অভিযোগ, ‘‘যাঁরা আজ আন্দোলন করছিলেন, তাঁরাই বহিরাগত। স্থানীয়দের নিয়োগের প্রশ্নে মাস চারেক আগে দলের নির্দেশে কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, স্থানীয়দের নিয়োগের জন্য একশো জনের তালিকা দেওয়া হবে। আজ পর্যন্ত সে তালিকা জমা পড়েনি।’’
এ দিকে, কারখানায় গোলমাল প্রসঙ্গে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘তৃণমূল ও তাদের শ্রমিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে কারখানাগুলিতে অশান্তি লেগেই থাকছে। এর জেরে শিল্পের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘আমরাই প্রথম বলেছিলাম, টাকার বিনিময়ে এই কারখানায় নিয়োগ হয়েছে। এ দিনের আন্দোলনে তা প্রমাণ হল। তবে করোনা-পরিস্থিতিতে কারও কাজ যাক, তা কাম্য নয়। স্থানীয়দের অন্যত্র নিয়োগ করা হোক।’’ তবে বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘কারখানার নিয়োগ স্বচ্ছ হতে হবে। স্থানীয়দের কাজ দিতে হবে। সে দাবিতেই আমাদের আন্দোলন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy