ভক্তদের ইচ্ছায় সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে এই মন্দিরে। — নিজস্ব চিত্র।
মন্দিরের প্রতিমায় বেলকাঁটা ফোটানোর পর বেরিয়ে এসেছিল রক্ত। সাধক কমলাকান্তের সেই কাণ্ড দেখে হতবাক হয়েছিল সকলে। এ রকম অসংখ্য ‘অলৌকিক’ ঘটনার জেরে সাধক কমলাকান্তের কালীবাড়ি নামেই পরিচিত বর্ধমানের বোরহাটের এই মন্দির।
কথিত, সাধক কমলাকান্তের মৃত্যুর সময় দেখা গিয়েছিল এমন অদ্ভুত ঘটনা। মৃত্যুর আগে অনেকেই গঙ্গা স্পর্শ করতে চান। সাধক কমলাকান্ত গঙ্গায় যেতে চাননি। তখন নাকি এই কালীবাড়ির মাটি ফুঁড়ে আচমকা উঠে এসেছিল জল, যা গঙ্গার বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। সেই জল যে স্থান থেকে উঠে এসেছিল, তাকে কুয়োর মত বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে কমলাকান্তের কালীবাড়িতে।
এই কালীবাড়ি স্থাপন করেন কমলাকান্ত। সালটা ১৮০৯। কথিত রয়েছে, এই মন্দিরেই পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে কালীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি। ১৯৭০ সাল থেকে পুজোর পর এক বছরের জন্য কালীর মৃন্ময়ী মূর্তি রেখে দেওয়া হত। তবে ভক্তদের ইচ্ছায় এখন সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে এই মন্দিরে।
কথিত রয়েছে, প্রতি অমাবস্যায় নিজের হাতে মাটির কালীমূর্তি গড়ে তার পুজো করতেন সাধক কমলাকান্ত। এ পুজোয় মাগুর মাছের পদ রেঁধে ভোগ দেওয়া হত দেবীকে। আজও রয়েছে সেই প্রথা। কমলাকান্তের জন্ম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। পাঁচ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর গলসির চান্না গ্রামে মামাবাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। পরে তন্ত্রসাধনার জন্য এ গ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন। বোরহাটের কাছে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনেও একটি গল্প রয়েছে। কমলাকান্তর কালীসাধনার কথা জানতে পেরে তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন সেখানকার তত্কালীন মহারাজ তেজচন্দ্র মহতাব। সেখানে কালী পুজোর দায়িত্ব দেন। নিজের উশৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচাঁদকে শিক্ষাদীক্ষা এবং সংস্কারে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্যও কমলাকান্তের দ্বারস্থ হন তিনি। সে জন্য কমলাকান্তকে বোরহাটের লাকুর্ডিতে একটি বাড়ি এবং কোটালহাটে একটি মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন তেজচন্দ্র। সে জমিতেই মন্দির স্থাপনা করে সিদ্ধিলাভ করেন কমলাকান্ত।
মন্দির পরিচালন বোর্ডের সভাপতি প্রশান্ত কোনার বলেন, ‘‘প্রতি দিন কালীকে ভোগে মাগুর মাছ খাওয়াতেন সাধক কমলাকান্ত। সে রীতি মেনে আজও মা কালীকে প্রত্যেক দিন মাগুর মাছের ভোগ দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মা কালী জীবিত অবস্থায় এ মন্দিরে অবস্থান করছেন প্রমাণ করতে মহারাজ তেজচন্দ্রের সামনে কালীমূর্তির পায়ে বেলকাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বার করে দেখান কমলাকান্ত। এমনকি, অমবস্যায় মহারাজকে নাকি পূর্ণিমার চাঁদও দেখিয়েছিলেন তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy