কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি-বিজড়িত সম্পদ সংরক্ষণে একযোগে উদ্যোগী হয়েছে আসানসোলের বনওয়ারিলাল ভালটিয়া কলেজ এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেতুবন্ধ’ সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়ক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসুকে কবির জন্মভিটা চুরুলিয়ায় রক্ষিত ১৩টি পুরনো নোটবই ও একটি পারিবারিক কোরান শরীফের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। শান্তনু সেই নথিগুলি ডিজিটাইজ় করতে তাঁর সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।
বনওয়ারিলাল ভালটিয়া কলেজের ব্রিটিশ লাইব্রেরির ‘এন্ডেঞ্জার্ড আর্কাইভস প্রজেক্ট’ পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় অধ্যক্ষ কলেজের গ্রন্থাগারিক তথা তাঁদের নিজস্ব ‘রাঢ়-কাইভ’-এর তত্ত্বাবধায়ক রাজর্ষি দাশকেও এই কর্মযজ্ঞে শান্তনুর সঙ্গে যুক্ত করেন। তাতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে ‘পাইলট প্রজেক্ট ১৬১২’। আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পে নজরুলের স্মৃতিচিহ্নগুলি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই কর্মকাণ্ডে চুরুলিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ছাত্রছাত্রী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসসিআরটি, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজ়িয়াম লন্ডন, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। কলেজ ও সেতুবন্ধ সংগ্রহশালার উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ শিবিরে এই সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে ‘ইনফ্লিবনেট’। প্রকল্প সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণের জন্য ত্রিদেব রুইদাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং আশুতোষ সরকার নামে তিন গবেষককে নিয়োগ করা হয়েছে। ১৯০০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে এই অমূল্য সংগ্রহ কবির ব্যক্তিগত ও সৃজনশীল জীবনের বহু অজানা অধ্যায় উন্মোচন করবে। এতে সঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার এবং বিভিন্ন গ্রামোফোন সংস্থা, আকাশবাণী ও চলচ্চিত্রের সঙ্গীত প্রশিক্ষক রূপে তাঁর কর্মবহুল জীবনের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজের ‘রাঢ়-কাইভ’ ইতিমধ্যেই নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। পাশাপাশি সেতুবন্ধ সংগ্রহশালার রয়েছে স্বতন্ত্র ইউটিউব চ্যানেল। এই বছর কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা। তার পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ ভাবে ডিজ়িটাল হিউম্যানিটিজ়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি আগ্রহীকে প্রশিক্ষিত করতে কর্মশালার আয়োজন করবে। সংস্কৃতি গবেষণা, ঐতিহ্য এবং ডিজ়িটাল হিউম্যানিটিজ়ের মতো ক্ষেত্রগুলিতে আরও গবেষণা, নিরীক্ষার জন্য মিডিয়া ল্যাবরেটরি স্থাপনের যৌথ পরিকল্পনাও রয়েছে। ১৬১২-প্রকল্পের গবেষকরা ইতিমধ্যেই আইআইটি দিল্লি, আইআইটি ধানবাদ, ন্যাশনাল ম্যানুস্ক্রিপ্ট মিশন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এসসিটিআর এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক শান্তনু গোটা প্রকল্পের সাফল্যের জন্য চুরুলিয়ার গ্রামবাসী, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ডিন সজলকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার পরেই কবিতীর্থ চুরুলিয়া এবং কবির সৃষ্টিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এতে আমরা গর্বিত।’’ রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারের কথায়, ‘‘এমন কাজে নজরুলপ্রেমী ও গবেষকদের কাছে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ভবিষ্যতে আমরা সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স চালু করব।’’ চুরুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, এমন কর্মযজ্ঞে তাঁরা পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)