Advertisement
E-Paper

শিশু-মনে দ্বেষ নয়, থাকুক সম্প্রীতির দেশ

সোমবার সকালে প্রতিদিনের মতই স্কুলে আসে রায়না ২ ব্লকের চকভূরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ জন পড়ুয়া। কিন্তু প্রতি দিনের প্রার্থনার গান এ দিন গাওয়া হয় না।

রায়নার স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

রায়নার স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪৩
Share
Save

‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম....’

কচি কচি গলায় ভেসে আসছে প্রার্থনসঙ্গীত। শিক্ষকেরাও প্রার্থনা করছেন, দেশ তেতে থাকলেও, সেই দ্বেষের রেশ যেন না পড়ে কচি মনগুলোয়।

ছোট্ট ছোট্ট হাতে ধরা পোস্টার। কারও মুখে হাসি, কারও মুখ গোমড়া। একটা পোস্টারে লেখা, ‘সম্প্রীতি ছাড়া কোনও জাতি উন্নতি করতে পারে না—নেলসন ম্যান্ডেলা’। অন্য একটিতে লেখা ‘ভেদাভেদ ভুলে সকলে মিলেমিশে থাকলেই সমাজে সম্প্রীতি বজায় থাকে—স্বামী বিবেকানন্দ’। কোথায় আবার মিলেমিশে পৃথিবী গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিহানায় প্রাণ গিয়েছে ২৬ জনের। জঙ্গি হানার নিন্দা করার সঙ্গেই জুড়ে যাচ্ছে ধর্ম, একে অপরের প্রতি বিষেদগার। এর মধ্যেই গরমের ছুটি পড়ছে স্কুলগুলিতে। বাড়িতে, প্রতিবেশীদের নানা আলোচনা কানে আসবে ছোটদেরও। কিন্তু শিশু মনে যাতে এই পরিস্থিতির আঁচ না পরে, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রায়নার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ গেয়ে প্রার্থনা করা থেকে, নানা পোস্টারে সম্প্রীতির বীজ বুনে দেওয়ার চেষ্টা করা হল তাদের মধ্যে।

সোমবার সকালে প্রতিদিনের মতই স্কুলে আসে রায়না ২ ব্লকের চকভূরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ জন পড়ুয়া। কিন্তু প্রতি দিনের প্রার্থনার গান এ দিন গাওয়া হয় না। নজরুলের গান গেয়ে, তার মর্মার্থ বুঝিয়ে বলা হয় পড়ুয়াদের। সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের ধারণা দেওয়া হয়। শেখানো হয় এক সঙ্গে চলার প্রয়োজন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেখ সরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘গরমের ছুটিতে স্কুলের পড়ুয়ারা মাঠেঘাটে খেলবে। সর্বত্রই কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা কানে আসতে পারে। পরিস্থিতি যেন পড়ুয়াদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে, তাই এই আয়োজন।’’ প্রধান শিক্ষক বকুল সরেনও বলেন, ‘‘শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের নেলসন ম্যান্ডেলা, বিকেকানন্দের সম্প্রীতির বাণী শেখানো হয়েছে। ভেদাভেদের বীজ ছোট থেকেই উপড়ে ফেলতে হবে।’’

চকভূরা গ্রামের মণ্ডলপাড়া, দাসপাড়া, মাঝের পাড়ায় নানা সম্প্রদায়ে মানুষের বাস। অভিভাবক সুবীর মণ্ডল, হেম ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘‘স্কুলে ছেলেমেয়েরা যা শেখে, সেটা আগামীর রসদ। স্কুলের এই আয়োজনে আমরা খুশি।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক জন শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। চকভূরা প্রাথমিক বিদ্যালয় তা প্রমাণ করল। পুঁথিগত পড়াশোনার বাইরেও যে বিদ্যালয়ের অনেক ভূমিকা থাকে, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তা স্মরণ করালেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Harmony

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}