E-Paper

দোলেও বিবর্ণ তাঁতিদের মহল্লা

দোকানে সাজানো গামলা ভর্তি লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আবির। পাশে রাখা রঙের প্যাকেট।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৭
তাঁত শিল্পের রমরমা বাজার আর নেই। বিক্রির আশায় রঙের পসরা নিয়ে বিক্রেতা। কালনার ধাত্রীগ্ৰাম বাজারে। নিজস্ব চিত্র

তাঁত শিল্পের রমরমা বাজার আর নেই। বিক্রির আশায় রঙের পসরা নিয়ে বিক্রেতা। কালনার ধাত্রীগ্ৰাম বাজারে। নিজস্ব চিত্র javedarafin mondal

তাঁতের বাজার যত ফিকে হয়েছে ততই বিবর্ণ হয়েছে কালনার ধাত্রীগ্রামের পোস্ট অফিস মোড়ের বৃদ্ধ অমরেশ পালের জীবন। বারান্দায় বসে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘তখন তাঁতশিল্পীরা দোলের ছুটি পেত। রং উড়ত বাতাসে। এখন তাঁতের ঘরে আলো জ্বলে না। শিল্পীরাও বিবর্ণ।’’

দোকানে সাজানো গামলা ভর্তি লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আবির। পাশে রাখা রঙের প্যাকেট। কালনার ধাত্রীগ্রাম পোস্ট অফিস মোড়ের কাছে নিজের দোকানে আবিরের গামলা নেড়েচেড়ে দেখে অমরেশ বলেন, ‘‘খরিদ্দার তেমন নেই। দু’দিন পরে দোল উৎসব। আগে দোলের সময়ে তিন কুইন্টাল আবির অনায়াসে বিক্রি হত। এখন এক কুইন্টাল কিনলে পড়ে থাকে অর্ধেক।’’ তাঁতের জন্য প্রসিদ্ধ ধাত্রীগ্রামের অলিগলিতে শোনা যেত তাঁত বোনার শব্দ। প্রচুর লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকত। গত এক দশকে বহু মানুষ তাঁতের পেশা ছেড়ে রুটিরুজির টানে গিয়েছেন অন্যত্র। অনেকের ঘরে তাঁতযন্ত্র পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

অমরেশ বলেন, ‘‘তাঁতের শাড়ির রমরমার সময়ে রাস্তার ধারে সুতো-সহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির দোকান করেছিলাম। ভাল চলত। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। তাঁতের শাড়ির এখন আর বিক্রি নেই। কম দামের (২০০, ২৫০,৩০০ টাকা) শাড়ি এখন বোনা হয় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার যন্ত্রে। এখন নানা জিনিসপত্র রেখে কোনও রকমে দোকান চালাই।’’ বৃদ্ধের দাবি, ‘‘দোলের সময়ে দীর্ঘ দিন ধরে আবির, রং বিক্রি করি। কোচবিহার-সহ নানা জায়গা থেকে আসা তাঁতশিল্পীরা ধাত্রীগ্রামে তাঁতঘরে কাজ করতেন। দোলে তারা প্রচুর আবির, রং কিনতেন। এখন আর আসেন না। শিল্পীদের হাতে অর্থ নেই। অনেকে তাঁত বোনা ছেড়ে পাঁপড়, চানাচুর বিক্রি করছেন। দোলের আবির কেনার খরিদ্দার তেমন নেই।’’

ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা রমা বসাক বলেন, ‘‘এক সময়ে তাঁত বুনে দিনে অনায়াসে ১০০০-১২০০ টাকা রোজগার করেছেন যাঁরা, তাঁরা এখন ২০০ টাকা উপার্জন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁতের রং ফিকে হওয়ায় দোলে আবির, রং কেনার ইচ্ছাই অনেকে হারিয়ে ফেলেছেন।’’ তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়। প্রাক্তন তাঁতশিল্পী অখিল বসাক এখন টোটোচালক। দোলের কথা উঠতেই বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগেও তাঁতের এত দুর্দিন ছিল না। দোলের সময়ে শাড়ি বোনা বন্ধ করে পরিবারের সকলকে নিয়ে আনন্দ করতাম। রং খেলা, ভাল খাওয়াদাওয়া, ঘোরা, সবই হত। এখন দোল এলে কান্না পায়। টোটো চালিয়ে যা আসে তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’’

এলাকার আর এক তাঁতি প্রবীর বসাকের কথায়, ‘‘বছর দশ আগেও দোলের দিন মালিকেরা রং খেলার জন্য তাঁত শ্রমিকদের ছুটি দিতেন। শাড়ির বাজার ভাল থাকায় টাকার জোগান ছিল পর্যাপ্ত। অনেকেই তাঁত বোনা বন্ধ করে নতুন পোশাক পরে রং খেলতেন। সে সব এখন অতীত।’’ দক্ষিণ শ্রীরামপুরের তাঁতশিল্পী তপন বসাক বলেন, ‘‘এক সময় দোলের দিন অনেক বাড়িতে কির্তনের আসর বসত। প্রতিবেশীদের দুপুরে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন অনেকে। এখন সে সব উঠে গিয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy