Advertisement
E-Paper

ডোবাল ‘লিঙ্ক’, ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা

ক্যানসারে আক্রান্ত বৃদ্ধা স্ত্রী-র জন্যে টাকা তুলতে পারলেন না তিনি। বহু অপেক্ষার খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হল। সৌজন্যে সেই চেনা সমস্যা— ‘লিঙ্ক ফেলিওর’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০১

ক্যানসারে আক্রান্ত বৃদ্ধা স্ত্রী-র জন্যে টাকা তুলতে পারলেন না তিনি। বহু অপেক্ষার খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হল। সৌজন্যে সেই চেনা সমস্যা— ‘লিঙ্ক ফেলিওর’।

সপ্তাহের প্রথম দিনে কালনা শহরের মুখ্য ডাকঘরে লিঙ্ক সমস্যায় জেরবার হলেন গ্রাহকেরা। শহরের চকবাজার এলাকায় রয়েছে মুখ্য ডাকঘরটি। এমআইএস, কিসান বিকাশ পত্র-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ রাখেন বহু গ্রাহক। এই গ্রাহকদের একটি বড় অংশ রয়েছে অবরসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী এবং সাধারণ বয়স্ক নাগরিকদের। যাঁরা গচ্ছিত অর্থের সুদ প্রতি মাসে তুলে চিকিৎসা-সহ নানা খরচ চালান। অনেকেরই এই গচ্ছিত অর্থই অন্যতম প্রধান সম্বল।

গ্রাহকরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শুরুতেই ডাকঘর কোর ব্যাঙ্কিং এর আওতায় আসে। তারপর থেকেই সমস্যার শুরু। টাকা তুলতে গেলেই অধিকাংশকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। কাউকে ঘুরতে হচ্ছে দশ। আবার কাউকে তারও বেশি দিন। গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘‘ডাকঘর খোলার পরে হাতেগোনা কয়েক জনকে পরিষেবা দেওয়ার পরেই কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিচ্ছেন লিঙ্ক নেই।’’

এ দিকে, ডাকঘর খোলামাত্রই টাকা পাওয়া যাবে এই আশায় ভোর হতেই ডাকঘরে সামনে পড়ছে লম্বা লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোদ গরম। বাধ্য হয়েই অনেকে গলদঘর্ম হয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রোদ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন লাগোয়া দোকানে।

কালনার ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা সুভাষ সিংহ। বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মীর কথায়, ‘‘এমআইএসের টাকাটা মাসের শুরুতেই খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ দিকে বার বার এসেও টাকাটা হাতে পাচ্ছি না।’’ এ দিন ডাকঘরে সামনে দেখা মিলল অনেক বয়ষ্কদেরও। এঁদেরই একজন পরেশচন্দ্র দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘হোটেল ব্যবসা ছিল। এখন আর কাজ করতে পারি না। ডাকঘরে কিছু টাকা আছে। মাস গেলে সেই সুদে ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী-র চিকিৎসা খরচ চালাই। তাও তুলতে পারছি না!’’ কৃষি দফতরে কাজ করতেন নারায়ণ সাধু। ২০০২ সালে তিনি অবসর নেন। বর্তমানে কিডনির অসুখে আক্রান্ত তাঁর স্ত্রী পুতুল সাধুখাঁ। সোমবার তাঁর দেখা মিলল ডাকঘর চত্বরে। পরিচিত অনেককেই পুতুলদেবী অনুনয়-বিনয় করলেন এমআইএসের টাকাটা জোগার করে দেওয়ার।। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সপ্তাহে দুদিন ডায়ালিসিস চলে স্বামীর। আগের দু’দিন এসে টাকা না পেয়ে ফিরে গিয়েছি। আজ টাকা না পেলে ভীষণ বিপদে পড়ব।’’

ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ জানালেন, টাকার অভাবে ভাড়া দিতে পারছেন না। কেউবা মেয়ের টিউশনের খরচ মেটাতে পারছেন না। সকলেরই প্রাপ্য টাকা পড়ে রয়েছে ডাকঘরে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে প্রতিদিনই ছোটখাটো ঝামেলা লেগে থাকছে। অথচ কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এ দিন ডাকঘরের সামনে এক গোছা কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তুষার সাহাকে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানান, কিসান বিকাশ পত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও ভাঙানো যাচ্ছে না। ১৬ দিন ধরে এসেও কোনও ফল হয়নি বলে তাঁর দাবি। দ্রুত পরিষেবা ঠিক করার দাবিতে তৃণমূলের তরফ থেকে এ দিন স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

গ্রাহকদের দুর্দশার কথা মেনেছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যা হচ্ছে তাতে আমাদেরও খারাপ লাগছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ তবে সমাধান নিয়ে আশ্বাস দিতে পারেননি তিনি।

link failure post office
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy