স্ত্রীকে খুনের দায়ে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বর্ধমানের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র এই সাজা শুনিয়েছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম বুধন আঁকুড়ে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার পূর্বতটী গ্রামে তাঁর বাড়ি। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে বুধনের সঙ্গে ভৈরবী আঁকুড়ের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে ভৈরবীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয় শ্বশুরবাড়িতে। বাপের বাড়ি থেকে আরও টাকা (পণ) আনার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হত। দাবি মতো টাকা এনে দিতে না পারায় তাঁর উপর অত্যাচারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ভৈরবীকে বাঁশ দিয়ে পেটান বুধন। তাতে গুরুতর জখম ৪০ বছরের মহিলা। তাঁকে বননবগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। পরের দিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই মহিলা। মৃতার বাবা নিমাই আঁকুড়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন থানায়। বধূ নির্যাতন এবং খুনের মামলা রুজু হয়। তদন্তে নামে পুলিশ। সে বছরেই ৩০ অক্টোবর রাতে বীরভূমের শান্তিনিকেতন থানার বিশুড়িয়া থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর থেকে জেলেই রয়েছেন বুধন।
খুনের ঘটনাটি ঘটে মৃতার দুই ছেলের চোখের সামনে। তাঁরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আদালতেও তাঁরা সাক্ষ্য দেন। মায়ের খুনে প্রত্যক্ষদর্শী দুই ছেলের বয়ানের ভিত্তিতেই দোষী সাব্যস্ত হন বাবা। সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবী বিষ্ণুপ্রসাদ শীল বলেন, ‘‘আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। রায় পুরোপুরি দেখা হয়নি। রায় দেখার পরে মন্তব্য করতে পারব। আমরা হাই কোর্টে আবেদন করার কথাও ভাবছি।’’ মামলার সরকারি আইনজীবী মোল্লা মহতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘বধূ নির্যাতনের দায়ে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে আসামিকে। তা ছাড়া খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দু’টি সাজাই একসঙ্গে চলবে।’’