Advertisement
E-Paper

Cyclone Jawad: ডুবেছে আলু, ধানের জমিও, ক্ষতির হিসাব কষছে দফতর

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় নিম্নচাপের জেরে গড় বৃষ্টি হয়েছে ৬৭.৬ মিলিমিটার। মূলত আলুর এলাকা বলে পরিচিত ব্লকগুলিতেই বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০১
মরিয়া: জমি থেকে জল বার করতে ব্যস্ত জামালপুরের এক চাষি।

মরিয়া: জমি থেকে জল বার করতে ব্যস্ত জামালপুরের এক চাষি। ছবি: উদিত সিংহ

কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু ডোবা জল দাঁড়িয়েছে চাষজমিতে। জল বার করার পরেও জমি শুকোতে অন্তত দু’সপ্তাহ লাগবে। চাষিদের দাবি, আলু চাষে মার খেয়ে ফের কত জন মাঠে নামবেন, সংশয় রয়েছে। যদিও জ্যোতি আলুর ক্ষেত্রে নতুন করে চাষের সময় এখনও আছে বলে মনে করছেন কর্তারা। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

কৃষি দফতরের দাবি, আলু ছাড়াও রায়না, খণ্ডঘোষ, মাধবডিহি, ভাতার ও গলসিতে ধানও ক্ষতির মুখে পড়বে। সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একাংশ পরিদর্শনে যান জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়া, উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল। সেখান থেকে ফিরে একটি বৈঠক করে চাষিদের পাশে কী ভাবে দাঁড়ানো সম্ভব, তার রূপরেখা তৈরি করেন তাঁরা। শম্পা বলেন, “এক কথায় চাষিদের মাথায় হাত। বর্ষাকালকেও হার মানিয়ে দেওয়া বৃষ্টি হয়েছে। বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় নিম্নচাপের জেরে গড় বৃষ্টি হয়েছে ৬৭.৬ মিলিমিটার। মূলত আলুর এলাকা বলে পরিচিত ব্লকগুলিতেই বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রায়না ১ ব্লকে ১৩৬.৪ মিলিমিটার, রায়না ২ ব্লকে ১২২.৬ মিলিমিটার, মেমারি ১ ব্লকে ১৩২ মিলিমিটার, কালনায় ১২৫.৮ মিলিমিটার, বর্ধমান ও জামালপুরে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবার আউশগ্রাম, গলসি, ভাতার, কেতুগ্রামে বৃষ্টির পরিমাণ কম।

জেলার এক কৃষি আবহাওয়াবিদ কিশোরগোপাল দত্তের কথায়, ‘‘সাধারণত বর্ষাকালে এক দিনে খুব বেশি ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি মেলে না। যে সমস্ত এলাকায় এই সময়ে ১০০ মিলিমিটারের আশেপাশে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে কম-বেশি চাষের ক্ষতি হবে।’’ উপ কৃষি অধিকর্তার (প্রশাসন) কথায়, ‘‘চাষিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি থেকে জল বার করার কথা বলা হয়েছে। পাঁচ-ছ’ঘণ্টার মধ্যে জল বার করতে পারলে ভাল হয়। প্রয়োজনে, পাম্প চালিয়েও জল বার করতে হবে। তবেই আলু গাছ বাঁচানো সম্ভব হবে।’’ তবে এই বৃষ্টির জেরে আলু চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় চন্দ্রমুখী আলুর চাষ একপ্রকার হবে না বলেই কৃষি দফতর মনে করছেন। জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জ্যোতি আলু চাষের জন্য সময় পাওয়া যাবে।’’ যদিও চাষিরা অন্য কথা বলছেন।

মেমারির পাহারহাটির স্বরূপ মণ্ডল, জামালপুরের বাবলু দাস, বর্ধমান ২ ব্লকের কৃষ্ণ মালিকদের দাবি, “সব জলের তলায়। মাসখানেক পরেও নতুন করে আলু চাষ সম্ভব নয়। বীজ-সার পাওয়া যাবে না। তার উপর শীত কাটতে শুরু করলে ধসা রোগ দেখা দেবে। খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’’ বড়শুলের চাষি শেখ কাশেম আলির ১৩ বিঘা জমি জলের নীচে। জামালপুরের দেবগোপাল দাসেরও দাবি, ‘‘ভোর ৩টে থেকে জমির আল কেটে জল বার করছি। ২০ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা জমির আলু গাছ পচে যাবে বলে ভয় পাচ্ছি।’’ কালনা ২ ব্লকের আলু চাষি ইব্রাহিম শেখও রবিবার রাত থেকেই জমিতে জমা জল বার করতে শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও যা জল জমে রয়েছে তাতে বীজ আলু সবই পচে যাবে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ দুশ্চিন্তায় ধান, সর্ষে চাষিরাও। খণ্ডঘোষের দইচাঁদা গ্রামের আবুল কাসেম মল্লিক, রায়নার বেঁদুয়া গ্রামের উত্তম মালিকদের দাবি, “ধান কাটব বললেই তো কাটা যায় না! অত মজুর পাব কোথায়? পোকার উপদ্রবের ধাক্কা সহ্য হওয়ার আগেই নিম্নচাপ!’’

কৃষি দফতরের হিসেবে, জেলায় ৪১,২৭৫ হেক্টর জমিতে আলু বসানো হয়েছিল। তার মধ্যে ক্ষতির মুখে ৩৬,০৭৫ হেক্টর জমি। ২৩টি ব্লকে খরিফ ধান চাষ হয়েছিল ৩,৬৯,৮৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ধান কাটা হয়নি বলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ৬৫,০৫৪ হেক্টর জমি। কাটা ধান পড়ে থাকায় ক্ষতির সম্ভাবনা আরও ১,০৮,২১০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া, ১৪,১১৫ হেক্টর জমির সর্ষে চাষেও ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষি কর্তাদের। সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন পরে, ক্ষয়ক্ষতির ছবিটা স্পষ্ট হবে।’’

rainfall Cyclone Jawad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy