তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ উপলক্ষে পশ্চিম বর্ধমানে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে দুর্গাপুরে অভিষেক একশো দিনের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ করলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সামনে আসার পরে, জেলার রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে তরজা। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি, জেলায় একশো দিনের প্রকল্পের কাজ বাবদ প্রায় ২৫ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। তবে রাজনৈতিক আকচাআকচিতে নজর নেই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও টাকা পাননি যাঁরা, সে সব নাগরিকদেরবড় অংশেরই।
এ দিন দুর্গাপুরে অভিষেক বলেন, “২০ লক্ষ পরিবার নিজেদের অধিকারের টাকা থেকে বঞ্চিত। রাজ্যে দু’কোটি ৬৫ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডার রয়েছেন, যাঁদের জীবন-জীবিকা একশো দিনের কাজের উপরে নির্ভর করে। কেন্দ্র তাঁদের টাকাআটকে রেখেছে।”
বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে চাপান-উতোর। বিজেপি-র আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র বক্তব্য, “অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিটি নেতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে। রাজ্য হিসাব দিতে না পারায় টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। ” যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “২০২১-এ বিধানসভা ভোটে হারার পরে বিজেপি রাজনৈতিক চক্রান্ত করে রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে টাকা আটকে রেখেছে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে এত দিন ওঁরা চুপ করে বসে থাকতেন না। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগাতেন।” যদিও, তৃণমূল ও বিজেপিকে এক পঙ্ক্তিতে বসিয়ে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, “রাজ্যকে টাকা দিতে হবে। কেন্দ্র বলছে দুর্নীতি হয়েছে। অথচ যে সব আধিকারিক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এই দুর্নীতিতে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হচ্ছে না। আসলে দু’টি সরকার চক্রান্ত করে বকেয়া টাকা দিচ্ছে না।”
এই তরজায় অবশ্য মন নেই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও টাকা না পাওয়া বাসিন্দাদের একাংশের। কাঁকসার বনকাটির বাসিন্দা কাঞ্চন রুইদাস জানান, ৮২ দিন কাজ করেও টাকা পাননি। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের অধীনেই কাজ করেছি। ফলে, মজুরি না মেটানোর দায় রাজ্য অস্বীকার করতে পারে না। কেন্দ্র-রাজ্য একে অপরের উপর দোষারোপ করছে। কাজ, টাকা, কোনওটাই পাচ্ছি না।” একই কথা বলছেন ৭৫ দিন কাজ করে মজুরি না পাওয়া আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শর্মিলা হেমব্রম, পশু কোড়ারা।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদ) প্রশান্তরাজ শুক্লা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)