E-Paper

গজাচ্ছে নানা সংস্থা, ঋণের জালে অনেকে

আধার ও ভোটার কার্ড নেওয়া হয় তাঁদের। আগে ঋণ নেওয়া থাকলে, তিনি নিয়মিত তা শোধ করছেন কি না, সেই রিপোর্ট দেখা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ০৮:৩৩
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার এক কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে কর্মস্থলেই। শুক্রবার রাতে গুসকরা শহরের সংহতি পল্লী এলাকায় ওই মৃত্যু এই ধরনের সংস্থা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। মৃত যুবকের মায়ের দাবি, কাজের জায়গায় তাঁর ছেলের উপরে খুব চাপ ছিল। তিন মাস বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারেননি তিনি। এক ম্যানেজার টাকা নিয়ে গায়েব হওয়ার ফলে তা উদ্ধারে অন্যদের মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ তাঁদের। চাপের কথা স্বীকার করেছেন মৃতের সহকর্মীদের একাংশও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরার মতো ছোট শহরেও গত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মত বেশ কিছু ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা গজিয়ে উঠেছে। যদিও এই সমস্ত সংস্থা সম্পর্কে কোনও তথ্যই তাঁদের কাছে নেই বলে দাবি পুরসভার। তাঁদের দাবি, পুর এলাকায় ব্যবসা করতে গেলে একটা ট্রেড লাইসেন্স লাগে। সেটাও এই ধরনের সংস্থা করাতে চায় না। কার্যত পুরসভাকে অন্ধকারে রেখেই চলে ব্যবসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার এক আধিকারিক জানান, গুসকরায় প্রায় ১৫-২০টি এরকম সংস্থা রয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ কিমি এলাকা জুড়ে তাঁদের ব্যবসা চলে। মূলত কম উপার্জনের মহিলা বা গৃহবধূদেরই তাঁরা ঋণ দেন। কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে একটা গোষ্ঠী তৈরি করতে হয়। আধার ও ভোটার কার্ড নেওয়া হয় তাঁদের। আগে ঋণ নেওয়া থাকলে, তিনি নিয়মিত তা শোধ করছেন কি না, সেই রিপোর্ট দেখা হয়। তারপরেই শুরু হয় ঋণ দেওয়া ও কিস্তিতে টাকা তোলা। ঋণ আদায়ের দায়িত্ব থাকে নিচুতলার কর্মীদের উপরে।

গুসকরায় ব্যবসা করা আর এক সংস্থার এক কর্মীর দাবি, সহজে ঋণ পেয়ে অনেকেই তা নিচ্ছেন। কিন্তু সময়ে তা শোধ করেন না অনেকে। তখন সেই চাপ আসে সংস্থার কর্মীদের উপরে। ঋণের টাকা তুলে আনতে মানসিক চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করতে হয়। সময়ে টাকা আনতে না পারলে জোটে কটূক্তি, চাকরি হারনোর ভয়। তবে এই মৃত্যুর পরেও এই সংস্থাগুলি কাজের ধরন নিয়ে কিছু বদলাবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই যায়।

এক ঋণ গ্রহীতা, মঙ্গলকোটের সিনুটের বাসিন্দা হাসমাতারা বিবির দাবি, “ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। এই সমস্ত সংস্থা থেকে সহজেই ঋণ পাওয়া যায়। তাই সুদ কিছুটা বেশি হলেও মানুষদের আগ্রহ বেশি থাকে।’’ আউশগ্রামের সোমাইপুরের এক বাসিন্দার আবার দাবি, ঋণ পাওয়া সহজ হলেও সুদের চক্রে পড়ে তা পরিশোধ করতে হাঁপিয়ে উঠতে হয়।

গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সংক্রান্ত কোনও তথ্যই পুরসভার কাছে নেই। এই সমস্ত সংস্থা থেকে ঋণ নিতে কোনও ঝক্কি পোহাতে হয় না। সেই ফাঁদেই পা দিচ্ছেন গরিব মানুষেরা, বিশেষ করে মহিলারা। চড়া সুদ গুনতে গিয়ে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’ এ নিয়ে অভিযান জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Guskara

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy