E-Paper

প্রধান পদ ‘পাকা’ হতেই  শান্তি ঘুচেছে মিনতির

২০১৩ সালে কংগ্রেসের হয়ে তিনি রায়নার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রাম থেকে জিতেছিলেন। তার পরে প্রায় চার বছর বাড়িছাড়া থাকতে হয়েছিল বলে অভিযোগ।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৮
মিনতির পাশে প্রতিবেশীরা।

মিনতির পাশে প্রতিবেশীরা। —নিজস্ব চিত্র।

জিতেও শান্তিতে নেই মিনতি মান্ডি।

২০১৩ সালে কংগ্রেসের হয়ে তিনি রায়নার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রাম থেকে জিতেছিলেন। তার পরে প্রায় চার বছর বাড়িছাড়া থাকতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায়না ১ ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। এ বছর ফের প্রার্থী হয়ে তিনি হারিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থীকে (চূড়ান্ত জয়-পরাজয় এখন আদালতের রায়ের উপরে নির্ভরশীল)। নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি জনজাতি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। আর এই পঞ্চায়েতে একমাত্র জনজাতি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে মিনতিই জিতেছেন। ফলে, এই ফলাফল বহাল থাকলে প্রধান পদটি তাঁর জন্য কার্যত ‘পাকা’। সে কারণে তৃণমূল তাঁকে দলে টানার জন্য নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগকে আমল দিতে চায়নি তৃণমূল।

নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে তৃণমূল জিতেছে। সিপিএম তিনটি ও কংগ্রেস একটি আসনে জয়ী হয়েছে। ঘটনাচক্রে, সংরক্ষিত আসনটিই কংগ্রেস জিতেছে। মিনতির অভিযোগ, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই অশান্তি চলছিল। গণনার দিন আমাকে মারধর করে, কিন্তু বার করে দিতে পারেনি। জয়ের শংসাপত্র নিয়েই বেরিয়েছি। কিন্তু জিতেও শান্তিতে থাকতে পারছি না।’’

মিনতি অভিযোগ করেন, সংরক্ষিত আসনের কারণে প্রধান হওয়া নিশ্চিত জানার পর থেকে ফের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটে জেতার পরেও শান্তিতে থাকার উপায় নেই। ২০০৩ সালে বাড়ি ছেড়ে চার বছর বর্ধমানে ছিলাম। এ বারও পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে যে কোনও সময়ে তৃণমূল হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। সে কারণে পরিজন থেকে দলের কর্মীরা বাড়ির চারপাশে পাহারায় থাকছেন।’’

কুলিয়া গ্রামের মুখে মিনতির একতলা পাকা বাড়ি। দরজা-জানলা নেই। ধানের ছোট গোলা রয়েছে। গোয়ালঘর আছে। বাড়িতে রয়েছে মোটরবাইক। মিনতি ও তাঁর স্বামী বাবলু, দু’জনই খেতমজুরের কাজ করেন। বাবলুর দাবি, ‘‘ভোটের আগে আমাকে শাবল দিয়ে মারধর করেছিল। এখন ফের অশান্তির প্ররোচনা দিচ্ছে তৃণমূল।’’ পাড়ার বাসিন্দা রামেশ্বর মান্ডি, সুভাষ মান্ডিদের দাবি, ‘‘মুদির দোকানে গেলেও হুমকি দিচ্ছে। সে জন্য আমরা মিনতির বাড়ি পাহারা দিচ্ছি। আশপাশের পাড়াও সতর্ক থাকছে।’’ শেখ মোক্তার আলি, জাহাঙ্গির শেখদের অভিযোগ, ‘‘সব সময় প্রছন্ন হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের কয়েক জন। চারদিকে যা সব ঘটছে, তাতে ভয় হচ্ছে।’’

ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, রায়না ১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি শেখ কুতুবউদ্দিন (টম্বল) অভিযোগ করেন, ‘‘প্রথমে ছিল বুথ দখলের জন্য অত্যাচার। এখন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি চলছে। ২০১৩ সালে জেতার পরে চার বছর বাইরে ছিলেন মিনতি, তখনও তিনি তৃণমূলে যোগ দেয়নি। এখন গোটা গ্রাম তাঁকে আগলে রেখেছে। যে দৃঢ়তা তিনি দেখাচ্ছেন, তাতে প্রধান হওয়ার জন্য নীতি বিসর্জন দেবেন বলে আমরা মনে করি না।’’

রায়না ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বামদেব মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘নিরপেক্ষ গণনা হয়েছে। সিপিএম পঞ্চায়েত পেয়েছে ব্লকে। আমি ১৫ বছর পঞ্চায়েত চালিয়েছি। হুমকি-অশান্তি ছাড়াই কী ভাবে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে হবে জানি। কংগ্রেসের সদস্য অকারণে ভয় পাচ্ছেন।’’

যদিও বাড়িতে চেয়ারে বসে বাবলু মান্ডি বলছিলেন, ‘‘আতঙ্ক যেন অশরীরীর মতো আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার কারণও আছে। তাই জিতেও আমাদের আনন্দ নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Bardhaman Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy