‘জেন জ়ি’-র আন্দোলনে উত্তপ্ত নেপাল। পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী। পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ অব্যাহত। এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন কর্মসূত্রে পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পনগরীতে থাকা নেপালিরা। বাড়ির জন্য মন কেমন করছে তাঁদের। না পারছেন মাতৃভূমিতে যেতে, না পাচ্ছেন আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের খবরাখবর। দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে প্রায় একশো পরিবার।
কোলিয়ারি, স্টিল এবং জুতোর কারখানার জন্য একসময় প্রচুর নেপাল থেকে আসা প্রচুর কর্মী বসবাস শুরু করেন আসানসোল, বার্নপুর ইত্যাদি জায়গায়। আসানসোলের সেনর্যালে সাইকেল কারখানা, গ্লাস ফ্যাক্টরি, ইস্কো কারখানা, কয়লা খনিতে ভারী কাজের জন্য নেপালি শ্রমিকদেরই মূলত নেওয়া হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্ত কারখানার অনেকগুলোই এখন বন্ধ। তবে রুজিরুটির টানে এখানে এসে নেপালে ফেরেননি অনেকেই। ইস্পাত শহর বার্নপুর যেমন। ইস্কো কারখানার এ-বি টাইপ আবাসন এলাকাটির পরিচিতি তৈরি হয়েছে ‘নেপালি ধাওড়া’ নামে। কেউ বলেন, ‘কাঠমান্ডু।’ প্রায় একশো পরিবার থাকে সেখানে। ৭০ বছর ধরে তাঁদের বসবাস। কেউ এসেছেন কর্মসূত্রে, কেউ বৈবাহিক সূত্রে। তাঁরা সকলেই এখনও উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। কেউ কেউ বাড়ির কথা ভেবে কেঁদে ফেলছেন।
বার্নপুর ইস্কো কারখানায় কাজ করেন নেপালের বহু বাসিন্দা। দিনভর পুরুষেরা ব্যস্ত থাকেন কারখানার কাজে। কিন্তু বাড়িতে মহিলাদের চোখ টিভিতে কিংবা মোবাইলে। ফোনে বার বার নেপালে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কখনও হোয়াট্সঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু জবাব আসছে না। কী ভাবেই বা হবে? নেপালে সমাজমাধ্যম তো এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যে টুকু যোগাযোগ করা যাচ্ছে, তাঁর মধ্যেই সব ঠিক আছে কি না, খবর নেওয়ার চেষ্টা। স্কুল খোলা কি না জানতে চাওয়া, দোকান-বাজার খোলা থাকছে কি না— এ সব খবর নিতে নিতেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বার্নপুরে বসে পুনম ছেত্রীর মন পড়ে রয়েছে নেপালে। কাঠমান্ডুর নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা পুনম বিয়ের পর থেকে বার্নপুরে থাকেন। ‘‘মা কেমন আছে? দাদা-বৌদি, ভাইপো, ভাইঝিরা কেমন আছে?’’ নিজের মনকেই প্রশ্ন করছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
সরস্বতী গুরুংয়ের বাড়ি ভরতপুর জেলার হরিপুরে। কাঠমান্ডু শহর থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বে তাঁদের বাড়ি। খবর পেয়েছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক জনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শিউরে উঠেছেন সরস্বতী। আন্দোলনের এই রূপ নিয়ে আতঙ্কিত পুনম, সরস্বতীরা। চান, দ্রুত শান্তি ফিরুক। কেউ অপেক্ষা করছেন, পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হওয়ার। তা হলেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।