Advertisement
E-Paper

স্কুলে ফেরাতে বাড়িতে শিক্ষকেরা

১৬০০ জনের মধ্যে কেবল ২৫০। আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার আসা পড়ুয়ার সংখ্যা এটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন শিক্ষকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন শিক্ষকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

১৬০০ জনের মধ্যে কেবল ২৫০। আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার আসা পড়ুয়ার সংখ্যা এটাই।

গত এক সপ্তাহে স্কুলে হাজিরা বাড়াতে কম চেষ্টা করেননি শিক্ষকরা। পরিচিতদের মাধ্যমে বাড়িতে খবর পাঠানো কিংবা প্রতি ক্লাসে নোটিস দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পড়ুয়াদের জানিয়েছেন, নিশ্চিন্তে বন্ধুদের স্কুলে নিয়ে আসতে। তাতেও পড়ুয়াদের হাজিরা বাড়ছে না দেখে বৃহস্পতিবার শিক্ষকরাই সটান চলে গেলেন পড়ুয়াদের বাড়ি। অভিভাবকদের অভয় দিয়ে বলেন, “কোনও চিন্তা নেই। সামনেই পরীক্ষা। পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠান। না-হলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে।”

স্কুলগেটের পাশে বেআইনি নির্মাণ ঘিরে দিন কয়েক আগে ধুন্ধুমার বেঁধেছিল আউশগ্রামের স্কুল ও থানা চত্বরে। গত ৩০ জানুয়ারি স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সভাপতির উপরে পুলিশের হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। পরের দিন আউশগ্রাম থানায় যথেচ্ছ ভাঙচুরের পর আগুন লাগানো হয়। সেই ঘটনায় ওই স্কুলের চার শিক্ষক-সহ গুসকরার তৃণমূল নেতা চঞ্চল গড়াই, পরিচালন সমিতির সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ ওই দুই নেতাকে ও সিপিএমের গুসকরা জোনালের সম্পাদক সুরেন হেমব্রমকেও গ্রেফতার করে। পরিস্থিতি দেখতে সিপিএমের নেতা ও প্রাক্তন বিধায়কদের প্রতিনিধি দল, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিজেপি নেতারা এলাকায় ঘুরে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডলও সভা করেন। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুও ওই এলাকায় গিয়ে মানুষের অভাব, অভিযোগ শোনেন।

গত দু’সপ্তাহ ধরে নেতাদের আনাগোনার পরেও স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি। পড়ুয়ারা স্কুলমুখো হচ্ছে না। এলাকা ছেড়ে কিছু পড়ুয়া আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বলে শিক্ষকদের কাছে খবর ছিল। এ দিন আউশগ্রামের বেশ কয়েক’টি পাড়া ঘুরে সে কথায় মালুম হল শিক্ষকদের। এ দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সন্ন্যাসী রুইদাসের নেতৃত্বে স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক অশোক ভৌমিক, সীতাংশু ঘটক-সহ ছয় শিক্ষক পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি যান। স্কুলের কাছে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে শিক্ষকরা বলেন, “স্কুলে না গেলে মাধ্যমিকের কোচিং ক্লাস করানো যাচ্ছে না।” দু’হাত দূরে একটি বাড়ির দরজা খুলে শিক্ষকদের দেখার পরেই শেফালি সাহা বলে উঠলেন, “আমার নাতিকে ভয়ে স্কুল পাঠাচ্ছি না।” শিক্ষকরা অভয় দেন। আউশগ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় গিয়ে আবার জানতে পারেন, বেশ কয়েক জন পড়ুয়া ভয়ে এলাকা ছেড়ে পরিজনদের বাড়িতে রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের ফিরিয়ে স্কুলে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, আউশগ্রাম সহ আট-দশটি গ্রামে ১৬০৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। সরস্বতী পুজোর পর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও ২৫০-৩০০ জনের বেশি আসছে না। আর কয়েক দিন পর থেকেই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে, পাঠ্যসূচি শেষ করা নিয়ে সমস্যা হবে—এই ভেবে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে এ দিন বাড়ি বাড়ি যান শিক্ষকরা। স্কুলের স্টাফ কাউন্সিলের সম্পাদক অশোকবাবুর কথায়, “এটা আমাদের কর্তব্য। সে জন্যই অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাতে বলেছি।” শিক্ষকরা জানান, অভিভাবকরা এ বার স্কুলে পড়ুয়াদের পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। মীনাবালা বাগদি, রেখা বাগদিরা বলেন, “স্যাররা বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁদের কথা মতো বাড়ির ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব। নাহলে ওরা পিছিয়ে পড়বে।”

Low Attendance School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy